সদ্যোজাত সন্তানকে হাসপাতালে রেখে নিখোঁজ হয়ে গেল নাবালিকা মা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালের নজরদারি ব্যবস্থা। কর্তৃপক্ষের দাবি, মঙ্গলবার গভীর রাতে শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে ওই নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যায়। ঘটনাটি ১০ মিনিটের মধ্যে জানাজানি হতেই পুলিশ এবং ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’ (সিডব্লিউসি)-কে জানানো হয়। যদিও হাসপাতালের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সিডব্লিউসি। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের আরও সজাগ থাকা প্রয়োজন ছিল বলেই মন্তব্য করেছেন সংস্থার চেয়ারপার্সন। পুলিশ জানায়, ওই মেয়েটি এক পরিচিতের বাড়িতে থাকে। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা ঝুলছে। সেই পরিচিতেরও খোঁজ নেই।
উত্তর শহরতলির একটি এলাকায় ১২ বছরের মেয়েটিকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পেয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রসব-যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় স্থানীয়
পুরপ্রতিনিধির উদ্যোগে ওই নাবালিকাকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সে এক কন্যার জন্ম দেয়। এর পরেই স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মঙ্গলবার বিধাননগরের নগরপাল, সিডব্লিউসি এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককে চিঠি লিখে ঘটনার তদন্ত করতে আবেদন জানান। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই পুরপ্রতিনিধি বুধবার বলেন, ‘‘আমার তরফে যতটা সম্ভব আমি চেষ্টা করেছি। হাসপাতালকে মঙ্গলবার দুপুরেই অনুরোধ করেছিলাম সতর্ক থাকার জন্য।’’ এই ঘটনায় কমিশনারেটের প্রশ্ন, মেয়েটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই কেন তাদের জানানো হল না?
সম্প্রতি একটি এলাকায় প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার সময়ে দুই স্বাস্থ্যকর্মী
মেয়েটির হদিস পান। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরেই এলাকায় প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। স্থানীয়েরা জানান, ওই নাবালিকা এক পরিচিতের বাড়িতে থাকে। কী ভাবে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হল, তা জানতে সেই ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা
করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু বিশেষ কিছু জানা যায়নি। হাসপাতালের সুপার পার্থপ্রতিম গুহ জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই নাবালিকা ওয়ার্ডের বাইরে শৌচাগারে গিয়েছিল। তার পরেই সে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে নিজের টাকার ব্যাগ, মোবাইলটিও নিয়ে যায়। সুপার বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয় থানার পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখছে।’’
কিন্তু এ ভাবে একটি নাবালিকা বেরিয়ে চলে গেল, আর কারও নজরে পড়ল না? সুপার বলেন, ‘‘নজরে পড়েছে বলেই তো দশ মিনিটের মধ্যে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে।’’ হাসপাতাল
সূত্রের খবর, মেয়েটির সঙ্গে তার এক পরিচিতও হাসপাতালে ছিলেন। তিনিও বুধবার হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছেন। ঘটনার পরে হাসপাতালের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন সিডব্লিউসি-র উত্তর ২৪ পরগনার চেয়ারপার্সন সহেলি রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমি পুলিশ এবং হাসপাতালকে বলেছিলাম, গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখতে,
নাবালিকার উপরে নজর রাখতে। এটা হাসপাতালের অবহেলার ফলেই ঘটেছে। এই ঘটনা তো পকসো আইনের আওতায় আসে। শিশুটিকে পাওয়া গেলে হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।’’
একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার বাবা এখানকার বাসিন্দা হলেও তার মা নাগাল্যান্ডের মানুষ। বিয়ের পরে তাঁরা এখানে কিছু দিন থাকলেও পরে আলাদা হয়ে যান। মহিলা নাগাল্যান্ডে ফিরে
গিয়েছেন। তার স্বামীও এখানে থাকেন না। নাবালিকা এখানে এক পরিচিতের বাড়িতে থাকে। সে এক-দেড় বছর আগে নাগাল্যান্ডে মায়ের কাছে গিয়েছিল। হাসপাতালের কর্মীরা জানান, নাবালিকা জানিয়েছে, সেখানে তার সঙ্গে একটি ছেলের আংটি বদল করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তার পরে তারা এখানে চলে আসে। কিছু দিন পরে ওই ছেলেটি নাগাল্যান্ডে ফিরে যায়। সহেলি জানান, তিনিও শুনেছেন যে, মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় থানার অবশ্য দাবি, তারা খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলেও নাবালিকাকে দেখতে পায়নি। আপাতত তার সন্ধান পেতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)