E-Paper

হাসপাতালে অসুস্থ ছেলের কাছে থেকেই পরীক্ষা দিলেন তরুণী

সিঙ্গুরের বড়া মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী, ২২ বছরের সাবা এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তিনি জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেই ছেলে সাফাকাতের জ্বর আসে। জ্বর কিছুতেই কমছিল না।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৪
An image of exam

—প্রতীকী চিত্র।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা তিন বছরের ছেলেকে আগলে রাখতে চেয়েছিলেন মা। কিন্তু, সেই সঙ্গেই মরিয়া ভাবে চাইছিলেন, শনিবার উচ্চ মাধ্যমিকের সংস্কৃত পরীক্ষাটাও দিতে। শেষ পর্যন্ত দুটোই একসঙ্গে করতে পারলেন সিঙ্গুরের বাসিন্দা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাবা মিদ্দে। শনিবার পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বসে সাবা বললেন, ‘‘আজ আমি সংস্কৃত পরীক্ষা হাসপাতালে ছেলের কাছে বসেই দিয়েছি। ছেলে কাছে থাকায় অনেক নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। আশা করছি, পরের পরীক্ষার আগেই ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে।’’

সিঙ্গুরের বড়া মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী, ২২ বছরের সাবা এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তিনি জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেই ছেলে সাফাকাতের জ্বর আসে। জ্বর কিছুতেই কমছিল না। সাফাকাতকে যে শিশুরোগ চিকিৎসক দেখেন, তিনি থাকেন কলকাতায়। শিশুটিকে কলকাতায় আনা হলে ওই চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, সাফাকাতের রক্তে সংক্রমণ হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। সাবা বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু যখন বললেন যে, ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, তখন তা শুনেই আমার দুশ্চিন্তা বহু গুণ বেড়ে গেল। এক দিকে ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা, অন্য দিকে আবার পরীক্ষাটা কী ভাবে দেব, তা নিয়েও চিন্তা শুরু হল। আজ সকালে হাসপাতালে বসে মনে হল, একটা শেষ চেষ্টা করে দেখি, যদি পরীক্ষাটা দেওয়া যায়। আমি আমার স্কুলে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম, হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দেওয়া কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তা হলে আমি হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দিতে চাই। কারণ, অসুস্থ ছেলে আমাকে ছেড়ে থাকতে চাইছে না। পরীক্ষার জন্য আমিও ওকে তিন-চার ঘণ্টা ছেড়ে থাকতে পারব না।’’

সাবার আবেদনে সাড়া দেয় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এই সব ক্ষেত্রে সব সময়ে মানবিক অবস্থান নিই। হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেওয়ার উদাহরণ অনেক আছে। এ দিন আমরা এক মায়ের আবেদন ফেলতে পারিনি। পার্ক স্ট্রিটের ওই বেসরকারি হাসপাতালের এলাকা আমাদের এন্টালি কেন্দ্রের অধীনে। সব কিছু জানার পরে খুব দ্রুততার সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের ওই বেসরকারি হাসপাতালে বসেই সাবাকে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

ছেলে যে ঘরে ভর্তি, ঠিক তার পাশের ঘরেই পুলিশি প্রহরায় ব্যবস্থা করা হয়েছিল সাবার পরীক্ষা দেওয়ার। সাবা বলেন, ‘‘ছেলেকে চিকিৎসকেরা এসে ইনজেকশন দিয়ে যাচ্ছেন। তাই দুশ্চিন্তা হচ্ছিল খুব। কিন্তু হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিতে পারায় অনেক সুবিধা হল। পরীক্ষাটাও ভাল হয়েছে।’’ সাবা জানান, পরের পরীক্ষা আবার বৃহস্পতিবার। তত দিনে আশা করা যায়, তিনি ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। তেমনটা হলে নিজস্ব পরীক্ষা কেন্দ্রেই পরীক্ষা দেবেন তিনি।

সাবার স্বামী থাকেন মুম্বইয়ে সোনার দোকানে কাজ করেন। সিঙ্গুরের বাড়িতে তিন বছরের ছেলেকে দেখাশোনা থেকে শুরু করে সংসারের কাজ, সবই প্রায় একা হাতে সামলাতে হয় সাবাকে। তবে, সংসারের কাজ ও ছেলেকে দেখাশোনার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন সাবা। হাসপাতালে ছেলের পাশে বসে বললেন, ‘‘এত ভাল প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও পরীক্ষাটা দিতে পারব না, এটা ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন খুব ভাল লাগছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Higher Secondary Exam 2024 Hospital Mother-Son Higher Secondary Council

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy