খালপাড়ের বাসিন্দাদের ভরসায় কেষ্টপুর খাল থেকে চিৎপুর পর্যন্ত ফেরিপথ চালুর স্বপ্ন দেখেছিলেন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি ভেবেছিলেন খাল নোংরা করবেন না খালপাড়বাসীরা। সেই খালপাড়বাসীদের কৃতকর্মই গৌতমবাবুর স্বপ্নকে খালের জলে ডুবিয়ে দিয়েছিল লঞ্চযাত্রার শুরুর দিনেই। কেষ্টপুর খালে লঞ্চ প্রবেশের আগে গজনবি খালে ডুবে থাকা টায়ার লঞ্চের প্রপেলরে জড়িয়ে লঞ্চ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানই ভেস্তে যায়। মুখ ‘পোড়ে’ বামফ্রন্ট সরকারের। শেষ পর্যন্ত পুরো প্রকল্পই ভেস্তে যায়।
অনেক বছর পরে আবারও খালপাড়বাসীদের সচেতনতার উপর আস্থা রেখে কেষ্টপুর খাল ও বাগজোলা খালের পাড়ের সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করেছে তৃণমূল সরকার। নেপথ্যে রাজ্যের সেচ দফতর এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ইতিমধ্যেই খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
খালগুলির পাড়ের ঝুপড়ি সরিয়ে সেখানে বাঁধানো পাড়, সবুজ ঘাসের গালিচা, বসার জায়গা, হাঁটা-চলার পথ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে দূষিত, পূতিগন্ধময় জলের দুটি খালের পাড়ে বসে মানুষ সেই সৌন্দর্যায়ন কতটা উপভোগ করবেন?
আরও পড়ুন: ‘চাপে’ অফিসারেরা, শহরে শিকেয় উঠেছে গুন্ডাদমন
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘খাল সংস্কার ও জলের প্রবাহ ঠিক রাখার বিষয়টি সেচ দফতর দেখছে।’’
খালপাড়বাসীদের সচেতন করার একাধিক চেষ্টা অতীতে ব্যর্থ হয়েছে। দখলদাররা তো বটেই এলাকার সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধেই খাল নোংরা করার অভিযোগ উঠেছে। বাগজোলা (আপার)-এর গায়ে বহুবার খাটাল উচ্ছেদ হয়েছে। নাগরিকদের কাছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা খাল পরিষ্কার রাখার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। বাগজোলা (লোয়ার)-এর গায়ে বহু জায়গায় এখনও দখলদার সরানো যায়নি। এখনও গৃহস্থ বাড়ি থেকে আবর্জনা ও বর্জ্য খালে ফেলা হয়। আর ওই খালটিতে জল ঢুকিয়ে পরিষ্কার করারও কোনও উপায় নেই।
সচেতনতার ঘোষণার উপরে নির্ভর করে বিপুল অর্থ ব্যয়ের যুক্তি নিয়ে উঠছে প্রশ্নও। পুরমন্ত্রী ফিরহাদের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘সৌন্দর্যায়ন এমন হবে যে মানুষ খাল নোংরা করবেন না। কলকাতা, নিউ টাউনে যদি সৌন্দর্যায়ন বজায় থাকে, তবে এখানেও থাকবে।’’ খালপাড়বাসীদের উপরে সরকারের ভরসায় খালের পরিচ্ছন্নতা কত দিন বজায় থাকে সেটাই দেখার।