E-Paper

ফুটপাথ আর রাস্তা আন্দাজ করে ভয়ে ভয়ে এগোচ্ছিলাম, শেষ রাতে কোমর জল ঠেলে এক কিলোমিটার হাঁটলাম

ধর্মতলা চত্বরে অফিসের গাড়িতে উঠেছি রাত ৩টের কিছু আগে। এটা প্রায় সাড়ে ৪টের কথা। শিয়ালদহ, বেলেঘাটা হয়ে ইএম বাইপাসে উঠে অল্প অল্প ডাঙা ঠাহর করা যাচ্ছিল। চিংড়িঘাটা থেকে বিধাননগরের দিকে বেঁকে যেতেই ফের সেই।

ঋকদেব ভট্টাচার্য 

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৫
কোমরজলে ডুবেছে গাড়ি।

কোমরজলে ডুবেছে গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত।

সল্টলেক সেক্টর ফাইভ মেট্রো স্টেশনের কাছে উড়ালপুল থেকে নেমে টের পেলাম, এত ক্ষণ যা পার করে এসেছি, সেটা কিছুই না। মালুম হল, জলাভূমি কাকে বলে! রাস্তার বাতির আলো যেখানে পড়ছে, মাটি আর চোখে পড়ে না। তার মধ্য দিয়ে পাওয়ার টিলারের মতো গোঁ-গোঁ করে জল কাটতে কাটতে এগিয়ে চলেছে গাড়িটা। মাঝ রাস্তায় বিকল হয়ে ক’টা গাড়ি দাঁড়িয়ে। ক’টা লোক দু’টো গাড়ি টেনে-ঠেলে একটু উঁচুর দিকে সরানোর চেষ্টা করছে।

ধর্মতলা চত্বরে অফিসের গাড়িতে উঠেছি রাত ৩টের কিছু আগে। এটা প্রায় সাড়ে ৪টের কথা। শিয়ালদহ, বেলেঘাটা হয়ে ইএম বাইপাসে উঠে অল্প অল্প ডাঙা ঠাহর করা যাচ্ছিল। চিংড়িঘাটা থেকে বিধাননগরের দিকে বেঁকে যেতেই ফের সেই। না এগোলে কোনও উড়ালপুলের উপরে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেই অপেক্ষার শেষ কোথায়, জানা নেই। প্রৌঢ় সারথি শেখ রাজ্জাক অত্যন্তই মিতভাষী। তিনিও বার দুই বলেছেন, এমন বৃষ্টি বহু যুগ দেখেননি। তা ছাড়া আধডোবা গাড়িও যেমন পথে পড়েছে, পাঁচ জন সওয়ারি নিয়ে কোথাও কোথাও পাশে চলেছে অটোরিকশা।

সেক্টর ফাইভ মেট্রোর থেকে সারদা চিট ফান্ডের মিডল্যান্ড পার্কের বন্ধ হয়ে যাওয়া অফিসটা পর্যন্ত কয়েকশো মিটার সেই পথ কোনও ক্রমে পেরিয়ে যখন অবস্থা কিছু কম বিপজ্জনক হল, গাড়ির ভিতরে জল গোড়ালি ছাড়িয়ে গিয়েছে। মহিষবাথানের কাছে আরও একটা দরিয়া পার করে, নিউ টাউন বাস স্ট্যান্ড থেকে ডান দিকে বাঁকার পরে বোঝা গেল, গাড়ির এগোনো অসম্ভব। ওখান থেকে এক কিলোমিটারের পথ বাকি। স্থির করলাম, হেঁটেই চলে যাব।

হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত জল ঠেলে সেই এক কিলোমিটার পেরোতে ঝাড়া আধ ঘণ্টা লাগল। অনেক দূরে দু’-এক জন লোক দেখা যাচ্ছিল। ফুটপাত আর রাস্তা আন্দাজ করে করে এগোতে গিয়ে এক বার টাল হারিয়ে টিফিন কৌটো ভরা ব্যাগটা ডুবল বটে, তবে মোবাইলটা বাঁচানো গেল। ফুটপাতে মাঝে মাঝে চারার মতো পথবাতির ক’টা খুঁটি একটু উঠেই থেমে রয়েছে। তার গলা পর্যন্ত জল, উপরে একটা প্লাগ গোঁজার সকেটের মতো কিছু বেরিয়ে আছে। দু’-একটা তো পুরোই ডুবে। রক্ষে, রাস্তায় আলো ছিল, কিন্তু ওতে বিদ্যুৎ ছিল না।

শেষ এখানেও নয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত নিউ টাউন বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকার পরে রাজ্জাক নানা রাস্তা দিয়ে ফেরার চেষ্টা করে, ব্যর্থ হয়ে, দু’বার ক্ষান্ত দেওয়া গাড়ি কোনও রকমে ফের চালু করে গিয়েছিলেন শ্যামবাজারের গ্যারাজ পর্যন্ত। তার পর পার্ক সার্কাসে বাড়ি ফিরেছেন, বাধ্য হয়ে জল ঠেলে হেঁটে, বিকেল ৩টে নাগাদ। রাতে ধুম জ্বরও এসেছে তাঁর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Heavy Rainfall Waterlogged waterlogged kolkata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy