Advertisement
১১ মে ২০২৪
Madhyamik Result 2023

সোনার আভা ছড়িয়ে ৯৪ শতাংশ এসএমএ আক্রান্ত কিশোরীর

দম্পতির কথায়, আত্মীয়, প্রতিবেশীরা এবং স্কুল পাশে থাকায় লড়াইটা কঠিন হয়নি। স্বর্ণাভার কথা ভেবেই সাহসপুর ঘোষাল এইচ এস স্কুল কর্তৃপক্ষ ওকে কোনও দিন দোতলায় ক্লাস করতে বলেননি।

An image of the student

অদম্য: স্বর্ণাভা বেরা ফাইল ছবি।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ০৭:২২
Share: Save:

দশ বছর বয়সে শেষ বার নিজে হেঁটেছিল সে। বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপাটি বন্ধ তখন থেকেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যত এই মেয়েকে জাপটে ধরেছে, ততই বইকে আঁকড়ে ডানা মেলেছে জ্ঞান, বুদ্ধি। ব্যর্থতাকে জয়করতে ওষুধ ছিল স্টিফেন হকিংয়ের ব্ল্যাক হোল এবং আইনস্টাইনের জীবনী। তাতেই ফিরেছে আত্মবিশ্বাস। সব বাধা ভেঙে মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ নম্বর পাওয়া মেয়ের লড়াইকে তাই বাবা-মা বলছেন, ‘‘আমরা সঙ্গে থাকলেও, পুরো লড়াইটা ও একা লড়েছে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানার তাতারপুর গ্রামের সর্বরঞ্জন ও সোমা বেরার বড় মেয়ে স্বর্ণাভা বেরা। জিনগত বিরল রোগস্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) টাইপ টু-তে আক্রান্ত মেয়েকে মোটরবাইকে চাপিয়ে এক কিলোমিটার দূরের সাহসপুর ঘোষাল হাইস্কুলে যাতায়াত করতেন বাবা, পেশায় চাষি সর্বরঞ্জন। চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী সোমা জানালেন, স্বর্ণাভার রোগ ধরা পড়ার কাহিনি। তিন বছর বয়সে দাঁড়াতে শিখেছিল সে। মেয়েকে মেদিনীপুরে কিংবা কটকে নিয়ে গিয়েও লাভ হয়নি। ভেলোরে নিয়ে গেলে জানা যায়, এসএমএ টাইপ টু রয়েছে স্বর্ণাভার।

দম্পতির কথায়, আত্মীয়, প্রতিবেশীরা এবং স্কুল পাশে থাকায় লড়াইটা কঠিন হয়নি। স্বর্ণাভার কথা ভেবেই সাহসপুর ঘোষাল এইচ এস স্কুল কর্তৃপক্ষ ওকে কোনও দিন দোতলায় ক্লাস করতে বলেননি। আর বন্ধুরা? ‘‘আমি দশ বছর বয়স পর্যন্ত তো খেলেছি। এখন বন্ধুরা বসেই আমার সঙ্গে গল্প করে। বই পড়ি। ছ’বছরের বোনের সঙ্গে মারামারিও চলে বসে বসেই।’’ ফোনের ও প্রান্ত থেকে জানাল কিশোরী। শরৎচন্দ্র আর বঙ্কিমচন্দ্রের বইয়ের পাশাপাশি শেক্সপিয়রের কবিতা আর নাটক প্রিয় স্বর্ণাভার।

প্রিয় বিষয় অঙ্ক। তবে জীবনবিজ্ঞানে ৯৯ পাওয়া স্বর্ণাভা ডাক্তার হতে চায়। দিনে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনার ফাঁকে তুলি আর জলরং হাতে সাবলীল মেয়ে এনেছে একাধিক পুরস্কার। অরিজিৎ সিংহের গানের ভক্ত স্বর্ণাভার এখন অপেক্ষা একটাই, জেঠিমার হাতে তৈরি মটন বিরিয়ানি কবে আসবে।

হুইলচেয়ার নেই। বিরল এই রোগের বিপুল খরচের ওষুধ নিখরচায় পেতে স্বর্ণাভা নাম তুলে এসেছে এসএসকেএমে। বেঁকে যাওয়া মেরুদণ্ডের যন্ত্রণায় মাটিতে বসে নিজেই লিখে মাধ্যমিক দিয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচার জরুরি। যদিও সেই টাকা কবে জোগাড় হবে, জানে না পরিবার। তবে, বিজ্ঞান নিয়ে মেয়েকে পড়ানোর খরচের কথাই আপাতত ভাবাচ্ছে বেরা দম্পতিকে।

স্বর্ণাভার স্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ ভুঁইয়া জানাচ্ছেন, পড়াশোনা নিয়ে অদম্য জেদ রয়েছেমেয়েটির। দাঁড়াতে না পারার জন্য বিজ্ঞানের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করতে ওর সমস্যা হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু, ওর জেদ যে, ও বিজ্ঞানই পড়বে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘মনোযোগী আর পরিশ্রমী হওয়ার পাশাপাশি স্বর্ণাভা আঁকেও খুব সুন্দর। তবে,ওর বাবাকেও আমাদের কুর্নিশ। প্রতিদিন মেয়েকে সময়ে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। কোলে করে ক্লাসে বসানো আর নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব হাসিমুখে পালন করতেন। সেটাওদেখার মতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE