E-Paper

অন্তঃসত্ত্বা ক্যানসার রোগিণীর সন্তানের জন্ম, সুস্থ মা ও শিশু

মাস তিনেক আগে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই বধূ। আর দিনকয়েক আগে অস্ত্রোপচার করে তাঁর স্তন পুনর্গঠনও করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বধূর দু’টি ইচ্ছাই সাফল্যের সঙ্গে পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৮
An image of baby

—প্রতীকী চিত্র।

ক্যানসারের নিরাময় করতে হলে গর্ভপাত করাতে হবে। চিকিৎসকদের এমন কথায় ভেঙে পড়লেও হাল ছাড়েননি বছর চৌত্রিশের বধূ। গর্ভস্থ সন্তানকে সুস্থ ভাবে জন্ম দেওয়া এবং একই সঙ্গে ক্যানসারের চিকিৎসা চালানোর আর্জি নিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। তাঁর জেদের কাছে হার মেনেছিলেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরাও। রীতিমতো ঝুঁকি নিয়েই অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করেছিলেন তাঁরা।

মাস তিনেক আগে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই বধূ। আর দিনকয়েক আগে অস্ত্রোপচার করে তাঁর স্তন পুনর্গঠনও করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বধূর দু’টি ইচ্ছাই সাফল্যের সঙ্গে পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। ওই বধূর চিকিৎসা করা স্তন ক্যানসার শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘ক্যানসারের চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যাগুলিকে ঠিক ভাবে বুঝে সেই মতো ব্যবস্থা নিতে হয়। তা হলে সমস্ত বাধা পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেমন এই ক্ষেত্রে হয়েছে।’’

পুরাতন মালদহের বাসিন্দা মহম্মদ আজাদ শেখ জানাচ্ছেন, গত বছর মে মাসে তাঁর স্ত্রী মলি খাতুন অন্তঃসত্ত্বা হন। সেই সময়েই মলি বাঁ দিকের স্তনে একটি মাংসপিণ্ড (টিউমার) রয়েছে বলে অনুভব করেন। স্থানীয় স্ত্রীরোগ চিকিৎসককে সেটি দেখালে তাঁরা পরীক্ষা করে জানান, মলি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। ওই রোগের চিকিৎসা করাতে হলে গর্ভপাত করাতে হবে। কিন্তু তাতে রাজি হননি দম্পতি। এক দিকে ক্যানসার, আর এক দিকে গর্ভস্থ সন্তান— এই দুই নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে ছিলেন তাঁরা। আজাদ বলেন, ‘‘আরও ডাক্তার দেখালাম, সকলেই একই কথা বলছিলেন। কিন্তু আমরা রাজি ছিলাম না। এই ভাবে প্রায় তিন মাস কেটে গেল।’’ এর পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে কলকাতায় আসার সিদ্ধান্ত নেন পেশায় দোকানে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কর্মী আজাদ।

গত বছরের জুলাইয়ে তাঁরা কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এসে ক্যানসার চিকিৎসক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মলির সঙ্গে কথা বলার পরে চিকিৎসক বুঝতে পারেন, বিষয়টিতে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। তাই ওই রোগীকে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। সেখানে মূলত কৌশিক এবং দীপ্তেন্দ্রর অধীনে চিকিৎসা শুরু হলেও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস, নিয়োনেটোলজির প্রধান চিকিৎসক সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। কৌশিক জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়ে যায়। আর মলি তাঁদের কাছে এসেছিলেন, যখন তাঁর দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার (প্রথম তিন মাসের পরের তিন মাসের অধ্যায়) চলছিল। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘ওই সময়কালে কেমো দিলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তেমন নেই। তাই তাড়াতাড়ি কেমো চালু করা হয়।’’

চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালের আশপাশে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন আজাদেরা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ পরীক্ষায় দেখা যায়, মলির গর্ভস্থ সন্তানের কিডনিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। তখন তড়িঘড়ি সিজ়ারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সেই মতো কেমো বন্ধ করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে মলি ও আজাদের সন্তান জন্ম নেয়। মালদহের ওই যুবক বলেন, ‘‘জন্মের পরে নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিটে বাচ্চাকে কয়েক দিন রেখে সুস্থ করে ছাড়া হল। আমাদের প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে পাব, তা ভাবতেই পারিনি।’’ দীপ্তেন্দ্র জানাচ্ছেন, সিজ়ারের আগে থেকে শুরু করে প্রসবের পরেও বেশ খানিকটা সময়— সব মিলিয়ে প্রায় দেড় মাস কেমো বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার ফলে মলি তাঁর সন্তানকে স্তন্যপানও করাতে পেরেছেন।

এর পরে ফের কেমো চালু হয় মলির। কিন্তু স্তনের মধ্যে থাকা টিউমারের আকার কমছে না দেখে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। টিউমার বাদ দেওয়ার পাশাপাশি পিঠ থেকে মাংস নিয়ে স্তন পুনর্গঠন করা হয়। দীপ্তেন্দ্র বলেন, ‘‘ক্যানসারমুক্ত করার পাশাপাশি রোগীর ইচ্ছে মতোই স্তন বাঁচানো ও মাতৃত্বের স্বাদ— দুই-ই দেওয়া সম্ভব হল।’’ আর সুভাষ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মা ও সন্তান, উভয়ের স্বাস্থ্যের দিকেই নজর রেখে ওষুধ দিতে হয়েছিল। কারণ, ক্যানসার আক্রান্ত ওই মায়ের কাছে মানসিক সুস্থতাই ছিল আসল। সেটা বজায় রাখতে পারার কারণেই ভাল ফল মিলেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Child Birth Cancer Patient Pregnant Woman Pregnancy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy