ফসল কাটার যন্ত্রে হাত ঢুকে যাওয়ায় কব্জির নীচ থেকে কেটে পড়ে গিয়েছিল। সেই কাটা অংশ নিয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন ১৪ বছরের কিশোরের পরিজনেরা। সেখান থেকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হাতের কাটা অংশ নিয়ে ওই কিশোরকে পাঠানো হয় কলকাতায়। আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগানো হল হাতের কাটা অংশ। হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে ওই কিশোর।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ওই কিশোরের নাম সমীর জামান শেখ। গত ১ মে সকালে বাড়িতেই ফসল কাটার যন্ত্রে হাত রেখে দাঁড়িয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলছিল অষ্টম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। পরিজনেরা জানান, তা দেখতে না পেয়ে বাড়ির এক সদস্য ঘরের ভিতর থেকে যন্ত্রটি চালিয়ে দেন। আচমকা যন্ত্রটি চালু হয়ে যাওয়ায় সমীরের ডান হাতটি ভিতরে ঢুকে যায়। তৎক্ষণাৎ তার কব্জির নীচ থেকে হাতের বাকি অংশ কেটে মাটিতে পড়ে যায়। সেই দৃশ্য দেখে বাড়ির অন্যেরা চেঁচামেঁচি শুরু করে দেন। তড়িঘড়ি যন্ত্র বন্ধ করা হয়। চলে আসেন প্রতিবেশীরাও।
ওই কিশোরের মা সাহিনা বিবি জানাচ্ছেন, সকলে মিলে প্রথমে সমীরকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাহিনা বলেন, ‘‘কাটা হাত জোড়া লাগানো যায়, এটা শুনেছিলাম। তাই ছেলের সঙ্গে ওই কাটা অংশটিও নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই হাতের কাটা অংশটিকে পরিষ্কার প্লাস্টিকে ঢুকিয়ে, বরফ দেওয়া বাক্সে ভরে দিয়ে আমাদের কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল।’’ তবে শহরে পৌঁছে কয়েকটি হাসপাতালে গেলেও প্রথমে শয্যা মেলেনি বলেই দাবি সাহিনার। তিনি জানান, এর পরে ওই দিন রাত ১১টা নাগাদ আনন্দপুরের ফর্টিস হাসপাতালে সমীরকে ভর্তি করা হয়। সেই রাতেই তার অস্ত্রোপচার করেন প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসক অখিলেশকুমার আগরওয়াল-সহ পাঁচ জন চিকিৎসকের দল।
অখিলেশ জানাচ্ছেন, কাটা অঙ্গে মাংসপেশী বেশি না থাকলে সেটি ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে পুনঃস্থাপন করতে হবে, তেমন নয়। সে ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি সময় লাগলেও অসুবিধা হয় না। তিনি বলেন, ‘‘তবে কাটা অঙ্গটিকে ঠিক পদ্ধতি মেনে সংরক্ষণ করে নিয়ে আসতে হয়। ওঁরা সেই মতো নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। তাই পুনঃস্থাপনে কোনও সমস্যা হয়নি।’’ ওই চিকিৎসক আরও জানাচ্ছেন, খুব সতর্কতার সঙ্গে সমীরের কব্জির কাছের শিরা, ধমনী, স্নায়ু ও টিসুগুলি জোড়া হয়। কেটে যাওয়া হাড়ও তার দিয়ে জোড়া হয়। অস্ত্রোপচারের পরে কিছু দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে হাতের আঙুল নাড়ানোর জন্য ফিজ়িওথেরাপিও শুরু করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিনকয়েক আগে ওই কিশোরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে। তবে এখনও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকার জন্য আনন্দপুর এলাকাতেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছেন সমীরের পরিজনেরা। বাড়িতেই নিয়মিত ড্রেসিং চলছে। অখিলেশের কথায়, ‘‘হাড় জোড়া লাগানোর জন্য যে তার ব্যবহার করা হয়েছে, আট সপ্তাহ পরে সেটি খুলে দেওয়া হবে। আস্তে আস্তে হাতের অসাড়তা পুরোপুরি কেটে যাবে। বয়স কম হওয়ার জন্য সুস্থতাও দ্রুত হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)