E-Paper

ওআরএস প্রয়োগে বিজ্ঞানকে মানুষের কাছে নিয়ে যান দিলীপ

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ষাটের দশকের গোড়ায় ক্যাশের সঙ্গে যোগাযোগ দিলীপের। ১৯৬৭ সালে ক্যাশ ঢাকায় কলেরা নিয়ে গবেষণারত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫৬
An image of Dr Dilip Mahalanabis

দিলীপ মহলানবীশ স্মারক বক্তৃতায় রিচার্ড ক্যাশ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিছক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিরীক্ষা নয়! জীবনের দিশা খোঁজার গল্প। সভ্যতার ইতিহাসে ‘ওআরএস’ চিকিৎসা বা নুন-চিনির জল প্রয়োগের সফলতম রূপকার দিলীপ মহলানবীশের গল্পটা যুদ্ধ-হিংসার ঘটনার থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়। সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম বছরের দিলীপ মহলানবীশ স্মারক বক্তৃতায় সেই গল্প বলার দিকেই ঝুঁকলেন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী রিচার্ড ক্যাশ। শুরুতেই তিনি বলেন, “আমি কিছু গল্প বলব। কারণ, আমরা গল্পই মনে রাখি।”

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বনগাঁ থেকে কুপার্স ক্যাম্পের শরণার্থী শিবিরে কলেরা, ডায়রিয়ার মোকাবিলায় নুন-চিনির জল প্রয়োগের কাহিনি রাজনৈতিক ঘটনাবলির আড়ালে চাপা পড়েনি। তা বহু মানুষের প্রাণ বাঁচায়। পরে ‘ওআরএস’ চিকিৎসাকে বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার আখ্যা দেয় ল্যানসেট পত্রিকা। হার্ভার্ড-চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেল্‌থ-এর বিজ্ঞানী ক্যাশ এ দিন বললেন, “এক কোটি লোকের শরণার্থী শিবিরে ডায়রিয়া, কলেরায় নুন-চিনির জলের প্রয়োগ মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ থেকে ৩.৬ শতাংশে নামিয়ে আনে!”

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ষাটের দশকের গোড়ায় ক্যাশের সঙ্গে যোগাযোগ দিলীপের। ১৯৬৭ সালে ক্যাশ ঢাকায় কলেরা নিয়ে গবেষণারত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আন্ত্রিক, কলেরার সঙ্গে যুদ্ধরত দিলীপের রসবোধ এবং সরস ভঙ্গিতে বোঝানোর ক্ষমতার কথাও বলেন ক্যাশ। তাঁর মতে, ‘‘শরণার্থী শিবিরে এই সব গুণও কাজে লেগেছিল।’’

অনুষ্ঠানটির উদ্যোক্তা, স্কুল অব লিভার ডিজ়িজ়-এর অধিকর্তা অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, “স্মারক বক্তৃতায় আমরা দিলীপবাবুর সঙ্গে এক সূত্রে গাঁথা কাউকে খুঁজছিলাম। ওআরএস নিয়ে প্রথমে নেচার পত্রিকায় লেখেন আর এক কৃতী বাঙালি ডাক্তার শম্ভুনাথ দে। এর পরে ক্যাশ এবং ডেভিড নালিন গবেষণা চালিয়েছেন। কিন্তু বিপর্যয় পরিস্থিতিতে এই চিকিৎসা পদ্ধতির সব চেয়ে সাহসী প্রয়োগ দিলীপ মহলানবীশেরই।”

শরণার্থী শিবিরে স্যালাইনের ওষুধ ফুরিয়ে যাওয়াতেই ওআরএস প্রয়োগের কথা মাথায় আসে দিলীপের। ক্যাশ বলছিলেন, “ডায়রিয়া, আন্ত্রিকের একেবারে অনুকূল পরিবেশ ছিল শরণার্থী শিবিরে। লোকে নিকাশি পাইপে সংসার পেতে থাকছিল। জমা জল, আবর্জনা! জলবাহিত রোগ ছড়ানোর জোর আশঙ্কা!” তার আগে বাংলাদেশে নদীকেন্দ্রিক সমাজে ডায়রিয়া, আন্ত্রিক সংক্রমণের পরিবেশ চিনেছিলেন ক্যাশ নিজেও। তিনি বলছিলেন, “কতটা জলে কতটা নুন, চিনি মেশাতে হবে তা ডাক্তারদের রোগীর আনা পাত্রে দাগ কেটে বোঝাতে হত। সেই সময়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ অভিযান নিয়েও গ্রামের মানুষের নানা ভুল ধারণা। অনেক সময়ে নিজেরা সেই তরল চেখে বোঝাতে হত, সেটা নিরাপদ।”

নুন-চিনির জলের গুরুত্ব বুঝিয়ে ক্যাশ বলেন, “কম খরচে এমন চিকিৎসা পদ্ধতিই সঙ্কট পরিস্থিতিতে আদর্শ। আধুনিক প্রযুক্তি এর পাশে অচল। বিজ্ঞানকে এ ভাবেই মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হয়।” আইএসআই-এর অধ্যাপক প্রবাল চৌধুরীর তৈরি ‘দিলীপ মহলানবীশ এবং ওআরএস’-তথ্যচিত্রও এ দিন দেখানো হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dr. Dilip Mahalanabis ORS

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy