Advertisement
২৬ অক্টোবর ২০২৪
Kanchanjunga Express Accident

বার বার দুর্ঘটনা কেন শিক্ষা দেয় না আমাদের?

সহকর্মীরা কে, কোথায় রয়েছেন, জানি না। রেলওয়ে মেল সার্ভিসের তিন কর্মী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের শেষ দিকের কামরায় ছিলাম। দুর্ঘটনার সময়ে এক নিমেষে তাঁরা কোথায় গেলেন, বুঝতেই পারলাম না।

পার্থসারথি মণ্ডল।

পার্থসারথি মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

পার্থসারথি মণ্ডল (কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মেল সার্ভিসের কর্মী)
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৭:৫২
Share: Save:

বিকট শব্দের পরে ঝাঁকুনি। ছিটকে মেঝেয় পড়ে গেলাম। মুহূর্তের মধ্যে আবার মনে হল, যেন উপরে উঠে গিয়েছি। কোনও মতে চোখ মেলে দেখি, ট্রেনের কামরায় নীচে চাপা পড়ে আছি। কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে। চোখের পাশটা ফেটে গিয়েছে। ডান চোখ খুলতে পারছি না। পা দুটো মুচড়ে রয়েছে। ডান হাতও চেপে আছে, নড়াচড়া করতে পারছি না। কিছু ক্ষণ পরে মনে হল, কয়েক জন টেনে বার করছেন আমাকে। আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরতে দেখি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুয়ে। শুধুই কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।

সহকর্মীরা কে, কোথায় রয়েছেন, জানি না। রেলওয়ে মেল সার্ভিসের তিন কর্মী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের শেষ দিকের কামরায় ছিলাম। দুর্ঘটনার সময়ে এক নিমেষে তাঁরা কোথায় গেলেন, বুঝতেই পারলাম না। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিয়ালদহ আসছিলাম। এনজেপি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ৯ মিনিটে ছেড়েছিল। রাঙাপানির পরে ট্রেনের গতি কমে যায়। তার পরে থেমেও যায়। তিন সহকর্মী মিলে গল্প করছিলাম। তার পরেই এই বিপদ।

পরে মোবাইল, ব্যাগ কিছুই পাইনি। রেলের তরফে কর্মীরা হাসপাতালে তাঁদের মোবাইল দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়ে সাহায্য করেছেন। তখনও চোখের পাশ থেকে রক্ত পড়ছিল। মাথায়, পায়ে, হাতে ব্যান্ডেজ দেখে কেঁদে ফেলেন স্ত্রী। আমাদের এক ছেলে। খবর শুনে ওরা রওনা দিয়েছে। কিন্তু সহকর্মীদের খবর না পেয়ে চিন্তায় আছি।

পেশার কারণেই নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত। যেখানে বন্দে ভারতের মতো ট্রেন চলে, সেখানে সিগন্যাল সমস্যার কথা শুনলে কিছুটা খারাপ লাগে। কেন এই উদাসীনতা, কেনই বা এ ভাবে এত প্রাণ যাবে, কেউ উত্তর দিতে পারবেন? আমি না হয় জীবন ফিরে পেয়েছি। অনেকেরই তো প্রাণ গেল। বার বার দুর্ঘটনা কেন শিক্ষা দেয় না আমাদের?

অনুলিখন: নীতেশ বর্মণ

অন্য বিষয়গুলি:

Kanchanjunga Express Accident Kanchanjunga Express
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE