Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Medical Student

আইনজীবী হতে বাধা র‌্যাগিং, পেটানো হয় বাবাকেও, এখন ডাক্তারি পড়ছেন সেই ছাত্র

আইন নিয়ে পড়বেন বলে দেবজিৎ গত বছর ভর্তি হয়েছিলেন সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে। তাঁর বাবা কলকাতা হাই কোর্টের কর্মী। দাদা হাই কোর্টের আইনজীবী দেবজিতেরও ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার।

An image of Stethoscope

—প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১২
Share: Save:

কেউ অবসাদে ভুগতে শুরু করেন, কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আবার অনেকেই জীবনভর র‌্যাগিংয়ের সেই মুহূর্ত থেকে বেরোতে পারেন না, জানাচ্ছেন চিকিৎকেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তেমনই কিছুই হয়েছিল কি না, সেই নিয়ে চর্চা চলছে। ইতিমধ্যেই স্বপ্নদীপের মৃত্যুর তদন্তে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, অনেকটা এমন পরিস্থিতিতে পড়েও ব্যতিক্রমী চরিত্র দেবজিৎ হালদার। কালীঘাট রোডের বছর কুড়ির এই যুবক র‌্যাগিংয়ের শিকার হলেও অন্য ভাবে ফিরে এসেছেন তিনি।

আইন নিয়ে পড়বেন বলে দেবজিৎ গত বছর ভর্তি হয়েছিলেন সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে। তাঁর বাবা কলকাতা হাই কোর্টের কর্মী। দাদা হাই কোর্টের আইনজীবী দেবজিতেরও ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু কলেজে পড়ার সেই স্মৃতি সুখকর হয়নি তাঁর। অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল করতে হবে বলে তাঁকে চাপ দেওয়া শুরু হয়। কলেজে গেলেই হেনস্থার মুখে পড়তে থাকেন দেবজিৎ। নানা অছিলায় ক্লাসে বা ইউনিয়নের ঘরে তাঁকে ঢুকিয়ে র‌্যাগিং শুরু হত বলে অভিযোগ। এক দিন চরম হেনস্থার শিকার হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে দাদাকে ফোনে বিষয়টি জানান প্রথম সিমেস্টারের ওই ছাত্র। দাদার নির্দেশেই এর পর তিনি কসবা থানায় গিয়ে জেনারেল ডায়েরি করেন। পরদিন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তাঁরা। একই অভিযোগপত্র কসবা
থানা ও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও জমা দেন।

এর পরেই কলেজ থেকে মেল করে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ডাকা হয়। অভিযোগ, সেই বৈঠকের জন্য কলেজে গেলে তাঁরা কেন কলেজে ঢুকেছেন, এই বলে দেবজিতের বাবা এবং দাদাকে মারধর করা হয়। দেবজিৎকেও চুলের মুঠি ধরে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। তাঁদের সঙ্গে থাকা মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। আতঙ্কিত হয়ে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ঢুকে পড়েন দেবজিতের বাবা। কলেজের সহ-অধ্যক্ষা ও পরিচালন সমিতির সভাপতির উপস্থিতিতে তখনকার মতো মিটমাট হয়। কিন্তু সভাপতি বেরিয়ে যেতেই রাস্তায় ফেলে দেবজিতের বাবা ও দাদাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। দেবজিতের বাবাকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। পরে কসবা থানায় এই অভিযোগ দায়ের হয়। বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং কলেজের সহ-অধ্যক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকাশ্যে আসে। সহ-অধ্যক্ষা পদত্যাগও করতে চান।

পুলিশের তরফে বলা হয়, তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ন্যূনতম জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি বলে দেবজিতের পরিবারের দাবি। এর পরে দেবজিৎ আর কলেজে যাননি। বদলে তিনি ডাক্তারি পড়ার তোড়জোড় শুরু করেন। সেই সূত্রেই গত মে-তে দেবজিৎ ‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট’ (নিট) দেন। তাতে পাশ করে গত সোমবারেই কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারিতে ভর্তি হয়েছেন তিনি। ছেলে আর আগের জায়গায় যাবে না জানিয়ে সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে চিঠি দিচ্ছেন দেবজিতের বাবা ধনঞ্জয় হালদার।

ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকে ছেলেটা ভয়ে কুঁকড়ে ছিল। স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল। জেদ ধরল ডাক্তারি পড়বে।’’ সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের সহ-অধ্যক্ষা নয়না চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই ছাত্রের খবরটা শুনে ভাল লাগছে।’’ ধনঞ্জয়ের সহকর্মী দেবাশিস ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েও দেবজিৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়নি। এটা অনেককেই উদ্বুদ্ধ করবে।’’ দেবজিৎ নিজে বলছেন, ‘‘যাদবপুরের ঘটনা শুনে খুব ভয় পেয়েছি। স্বপ্নদীপের পরিবার তো দূরে থাকে। আমার পরিবার সঙ্গে ছিল বলেই হয়তো খারাপ কিছু হয়নি। সকলের মনের সেই অবস্থা থাকে না। তবু বলব, র‌্যাগিং মানেই সব শেষ নয়। মনটা শক্ত রেখে এগোতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE