Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Crime

Murder: ধাওয়া করে, কুপিয়ে খুন কিশোরকে

এন্টালির দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের এই ঘটনায় ওই কিশোরকে উদ্ধার করে দ্রুত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।

মহম্মদ সোনু

মহম্মদ সোনু

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৫:৪০
Share: Save:

মধ্যরাতে পাড়ার গলি দিয়ে ছুটছে এক কিশোর। তার ডান হাত ঘাড়ের কাছে চেপে ধরা। সেখান দিয়ে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে রক্ত! তাকে ধাওয়া করতে করতে পিছনে দৌড়চ্ছে আরও কয়েক জন। এর পরে শেষ রাতে ওই কিশোরকেই রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেল পাড়া থেকে মাত্র তিনশো মিটার দূরে!

শুক্রবার এন্টালির দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের এই ঘটনায় ওই কিশোরকে উদ্ধার করে দ্রুত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। জরুরি অস্ত্রোপচারের আগেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, কোনও কিছু দিয়ে কোপানো হয়েছে তাকে। গলার ডান দিকের অংশের পাশাপাশি দুই হাত, পা এবং মাথাতেও গভীর চোট ছিল ওই কিশোরের।

যদিও এমনটা কী ভাবে এবং কী কারণে ঘটল, তা জানা যায়নি শনিবার রাত পর্যন্ত। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় রাতে শহরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল, ওই কিশোরকে চোর সন্দেহে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। যদিও পরে পুলিশের একাংশ দাবি করে, পুরনো বিবাদের জেরেও ওই কিশোর খুন হয়ে থাকতে পারে। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘খুন কে করেছে ও কেন, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আক্রান্তের পরিচিতি অপ্রাসঙ্গিক।’’ এই ঘটনায় তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ষোলোর ওই কিশোরের নাম মহম্মদ সোনু। ৬৬ নম্বর দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের এক বস্তিতে তার বাড়ি। বাবা মহম্মদ ফিরোজের মুদির দোকান রয়েছে। মা সিতারা বিবি আনাজ বিক্রি করেন। সিতারা এ দিন বলেন, ‘‘ছেলেকে পড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু হয়নি। রাতে কয়েক জন বন্ধু মিলে ভ্যান নিয়ে শিয়ালদহে আনাজ বিক্রি করতে যেত। শুক্রবারও সে কথা বলেই বেরিয়েছিল। রাত আড়াইটে নাগাদ খবর আসে, সোনুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গিয়ে দেখি, সব শেষ।’’

পুলিশ জানায়, ওই রাতে টহলে বেরিয়েছিলেন এন্টালি থানার এক পুলিশ আধিকারিক। পামারবাজার এলাকায় দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের উপরেই ওই কিশোরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সেখানেই ছিলেন মহম্মদ ওয়াসিম আক্রম খান ওরফে আমন, মহম্মদ জাফর এবং মহম্মদ রাজা নামে তিন ব্যক্তি। তাঁরা দাবি করেন, রাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন তাঁরা। তখনই দেখেন, রাস্তার ধারে পড়ে রক্তাক্ত ওই কিশোর কাতরাচ্ছে। কী করে তার ওই অবস্থা হল, জানতে চাওয়া হলেও সে কিছুই জানাতে পারেনি বলে তাঁদের দাবি।

তদন্তে নেমে এন্টালি থানার পাশাপাশি ঘটনাস্থলে যান লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারাও। তাঁরা দেখেন, দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের ওই পাড়ার বেশ কয়েকটি বাড়ির গায়ে চাপ চাপ রক্ত লেগে। ইতিউতি পড়ে রয়েছে রক্ত মাখা ভাঙা টালি। ওই পাড়া থেকেই মাত্র তিনশো মিটার দূরে রাস্তার উপরে মহম্মদ সোনুকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। পাড়ারই একটি বাড়ি থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পায় পুলিশ। তাতে দেখা যায়, রাত ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ ওই গলি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক কিশোর। ঠিক এক মিনিটের মধ্যেই গলায় ডান হাত চেপে ধরে ছুটে পালিয়ে আসছে সে। পিছনে ধাওয়া করেছে কয়েক জন। পুলিশের অনুমান, গলার কাছে ক্ষতের উপরে হাত চেপে ছুটছিল সোনু। ফুটেজ এবং একাধিক বয়ানের ভিত্তিতে এর পরে তিন জনকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Entally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE