Advertisement
E-Paper

ক্যানসার-যুদ্ধে ভরসা হতে উপহার চুল

ক্যানসার রোগীদের জন্য নিজের কেশ দান করতে চেয়ে কলকাতার বিভিন্ন পার্লার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে এমনই প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন পেশায় চিকিৎসক আরুণি গর্গ।

বিজয়িনী: ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীন নিজের এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেন অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রে।

বিজয়িনী: ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীন নিজের এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেন অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রে।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৮
Share
Save

চুল দান! তাই আবার হয় নাকি?

ক্যানসার রোগীদের জন্য নিজের কেশ দান করতে চেয়ে কলকাতার বিভিন্ন পার্লার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে এমনই প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন পেশায় চিকিৎসক আরুণি গর্গ। তবে চেষ্টা থামেনি। এক বছর পরে সার্থক হতে চলেছে আরুণির অপেক্ষা। কাল, রবিবার এ শহরের একদল নারী-পুরুষ চুল দান করবেন ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য। আর সেই দান অগুনতি ক্যানসার রোগীর ঠোঁটে আত্মবিশ্বাসের হাসি ফোটাবে বলেই আশা তাঁদের।

কেমোথেরাপির পরে বহু ক্যানসার রোগীই ভোগেন চুল ওঠার সমস্যায়। রোগীদের মনস্তত্ত্বে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলে বলেই জানান চিকিৎসকেরা। ক্যানসার চিকিৎসক রাকেশ রায়ের কথায়, ‘‘কেমোথেরাপির জন্য চুল উঠবে, বমি হবে, এটা বলে দেওয়া সহজ। কিন্তু এক বার যখন চুল উঠতে শুরু করে, তখন মহিলাদের মনের উপরে তা অসম্ভব চাপ ফেলে। রোগীকে এ কথাও বলতে শুনেছি, এমন কেমো দিন, যাতে চুল কম ওঠে।’’

চুলের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে যুক্তি-তর্ক চলতেই পারে। তবে রোগীর মানসিক অবস্থার কথা ভেবে পরচুলা ব্যবহারেরই পরামর্শ দেন অধিকাংশ চিকিৎসক। কিন্তু তার মান ভাল হওয়া খুব প্রয়োজন। আসল চুল দিয়ে সেই উইগ তৈরি করলে ভাল হয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কৃত্রিম সেই চুল তৈরির জন্য দান করা যায় নিজেদের কেশগুচ্ছ। আরুণি তেমনই করার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। সেই অপেক্ষার অবসানের সুযোগ করে দিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কাল, রবিবার ময়দান এলাকার রেঞ্জার্স গ্রাউন্ডে তার ব্যবস্থা করেছে তারা। সকাল সাড়ে ছ’টা পরে যে কোনও সময়ে গিয়ে ১২ ইঞ্চি চুল দান করা যাবে সেখানে। এর জন্য আগে থেকে আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় ০০৯৭১৫০৭১৪৯৪৫৭ নম্বরে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সিইও প্রেমী ম্যাথিউ বলেন, ‘‘ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। সেই ধাক্কা সামলে অনেকেই আর ভাল উইগ কিনতে পারেন না। নিখরচায় চুল দানের জন্য সকলে যাতে এগিয়ে আসেন তাই এই উদ্যোগ।’’

আরুণি বলছিলেন, খুব ঘনিষ্ঠ এক জনকে এই সমস্যায় মারাত্মক মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে দেখেছেন তিনি। তিনি বলছিলেন, ‘‘তিন বছর হল কলকাতায় আছি। মুম্বইয়ে থাকার সময়ে সেখানে এই ধরনের উদ্যোগের কথা জেনেছিলাম। বিদেশেও এ রকম অনেক হয় বলে শুনেছি। তাই এখানে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেছি। কেউ বলতে না পারায় শেষে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘হেয়ার ফর হোপ ইন্ডিয়া’র কথা জানতে পেরে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’ চুল দান যে এখানে তেমন হয় না, তার জন্য মূলত সচেতনতার অভাবই দায়ী বলে মনে করছেন প্রেমী।

ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মস্তিষ্কে ক্যানসারে রেডিয়েশন দেওয়ার পরে ব্যবহারের পরে মাথায় চুল গজানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ হয়ে যায়। এমন ক্ষেত্রে উইগ ব্যবহার করে অনেককে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে দেখেছি।’’ তবে সব রকম অনভিপ্রেত ভাবনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাজারহাটের এক ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বারো বছরের অনুষ্কা নাগ বলে, ‘‘চিকিৎসা হলে আমি ভাল থাকব, সেটাই আসল। কে কী ভাবল, তা ভেবে লাভ কী!’’

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধারের অভিজ্ঞতা বলছে, কেমোথেরাপির জন্য নেড়া হলে বন্ধুমহলে টিকা-টিপ্পনী ছেলেদেরও শুনতে হয়। একই সঙ্গে তিনি জানান, চুল যাঁরা দান করেন, তাঁদের জন্যও অনেক বাধা অপেক্ষা করে থাকে।

খড়্গপুর আইআইটি-র অ্যাকোয়াকালচার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী অশ্বিনী বিশ্বনাথন দ্বিতীয় বার নিজের চুল কেটে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন। কেরলের বাসিন্দা অশ্বিনী বলেন, ‘‘প্রথম বার যখন চুল কাটার কথা পরিবারকে জানালাম, কেমন একটা গেল গেল রব উঠেছিল। সাধারণত ছোটবেলায় এবং কারও পরিবারে বিয়োগ ঘটলে তবেই মাথার চুল কামানোর রীতি রয়েছে। তেমন কোনও কারণ ছাড়া চুল কাটার কথা বলায় আমার স্বামী প্রথমে মানতে চাননি।’’ তবে সে সব বাধাকে পাত্তা দেননি অশ্বিনী। পাত্তা দিতে চান না ইংরেজি স্নাতকোত্তরের ছাত্রী স্বাগতা মজুমদারও। তাই এ বার চুল দান করবেন তিনিও। স্বাগতার কথায়, ‘‘চুল তো আবার বড় হয়ে যাবে। কিন্তু আমার একটি ছোট পদক্ষেপে যদি কেউ উপকৃত হন, তার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?’’

Cancer Hair Donation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}