নাক দিয়ে অনবরত জল ঝরছে। সঙ্গে বার বার জ্বর আসছে। স্থানীয় স্তরে চিকিৎসা করালেও সমস্যা মেটেনি, উল্টে বড় বিপত্তি দেখা দিয়েছিল। মস্তিষ্কের বেশ খানিকটা অংশ বেরিয়ে এসেছিল নাকের মধ্যে। আর যে জল বেরোচ্ছিল, তা আসলে মস্তিষ্কের জল! অবশেষে মস্তিষ্ক ও নাকে কয়েক ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে বাংলাদেশের এক যুবককে সুস্থ করে তুলল শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল।
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের বাসিন্দা, বছর কুড়ির মহম্মদ জাহিদ হাসানের গত আট মাস ধরে নাক দিয়ে জল পড়া, বার বার জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা চলছিল। সেখানকার চিকিৎসকেরা সন্দেহ করেন, ওই যুবক মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত। পাশাপাশি, নাকে পলিপ থাকায় সেটিরও অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু সমস্যা কমার বদলে নাক দিয়ে জল বেরোনো আরও বেড়ে যায়। জ্বরও আসতে থাকে। এর পরেই চিকিৎসার জন্য ওই যুবককে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন তাঁর পরিজনেরা।
সিএমআরআই হাসপাতালে জাহিদের অস্ত্রোপচার করা স্নায়ু শল্য চিকিৎসক অমিতাভ চন্দ জানাচ্ছেন, ওই যুবককে পরীক্ষা করে দেখা যায়, সমস্যা গুরুতর। পলিপ অস্ত্রোপচারের সময়ে কোনও ভাবে মস্তিষ্ক ও নাকের সংযোগস্থলের প্রাচীরে বড় ফুটো তৈরি হয়েছে। তা দিয়ে মস্তিষ্কের বেশ খানিকটা অংশ বেরিয়ে এসেছে নাকের ভিতরে। তাতেই সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (মস্তিষ্কের জল) বেরিয়ে আসছে বাইরে। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত, অনুপমা শতপথী, অ্যানাস্থেটিস্ট সুদেষ্ণা বেরা মণ্ডলের দলকে সঙ্গে নিয়ে অমিতাভ অস্ত্রোপচারটি করেন।
তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল, নাক দিয়েই সমস্যার সমাধান করা যাবে। কিন্তু মস্তিষ্কের অনেকটা বেরিয়ে আসায় তা সম্ভব হবে না বোঝা যায়। তখন মস্তিষ্ক কেটে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়।’’ অমিতাভ জানাচ্ছেন, মস্তিষ্ক কেটে নাকে বেরিয়ে আসা অংশকে স্বস্থানে ফেরানো হয়। পাশাপাশি, খুলির কিছুটা অংশ এবং পা থেকে মাংসপেশি নিয়ে নাকের প্রাচীরের ফুটো বন্ধ করা হয়।
ওই বেসরকারি হাসপাতালের ইউনিট প্রধান সোমব্রত রায় জানান, জটিল ওই অস্ত্রোপচারের পুরো খরচ জোগাড় করতে না পারায় চিকিৎসা করানো থেকে পিছিয়ে আসছিল জাহিদের পরিবার। তখন হাসপাতালের জনহিতৈষীমূলক তহবিল থেকে সহযোগিতা করা হয় বাংলাদেশি ওই যুবককে। দিনকয়েক আগে সুস্থ হয়ে ছুটি পেয়েছেন জাহিদ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রাণের ঝুঁকি কেটেছে। আবার তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)