Advertisement
০৫ মে ২০২৪
চাঁদনি এলাকা

সিবিআই-অভিযুক্তের মৃতদেহ গেস্ট হাউসে

সিবিআই-এর জালে ফেঁসে যাওয়া এই রাজ্যের কয়েক জন অভিযুক্তকে তিনি বাঁচিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই আশ্বাসের বদলে প্রচুর টাকাও নিয়েছিলেন তিনি। কেরলের কোঝিকোড়ের বাসিন্দা সেই যুবক সাবিস কুমার কুন্নুত (৩৯)-কে এ বিষয়ে কলকাতায় ডেকে জেরা করছিলেন সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০২:১৫
Share: Save:

সিবিআই-এর জালে ফেঁসে যাওয়া এই রাজ্যের কয়েক জন অভিযুক্তকে তিনি বাঁচিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই আশ্বাসের বদলে প্রচুর টাকাও নিয়েছিলেন তিনি। কেরলের কোঝিকোড়ের বাসিন্দা সেই যুবক সাবিস কুমার কুন্নুত (৩৯)-কে এ বিষয়ে কলকাতায় ডেকে জেরা করছিলেন সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা।

সোমবার দুপুরে মধ্য কলকাতার চাঁদনি চক এলাকার একটি গেস্ট হাউসের দরজা ভেঙে সেই সাবিসের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন। কেরলে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। এ দিন রাত পর্যন্ত ওই যুবকের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে দাবি পুলিশের।

সূত্রের খবর, বহরমপুরের একটি বিমা সংস্থার দুর্নীতির তদন্তে নেমেছিল সিবিআই। জানা গিয়েছে, হিমঘরের বিমা করাত ওই সংস্থা। তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পারে, প্রতি বছর ভুয়ো ক্ষতি দেখিয়ে হিমঘর প্রতি ২০ লক্ষ টাকা বিমা সংস্থা থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছিল। এই ঘটনায় ওই বিমা সংস্থার বেশ কিছু অফিসার এবং হিমঘরের কিছু মালিকের নামে মামলা শুরু করে সিবিআই। আর এখানেই উঠে আসে সাবিসের নাম। জানা গিয়েছে, সিবিআই-এর জালে ফেঁসে যাওয়া বিমা সংস্থার অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় সাবিসের। সিবিআই সূত্রের খবর, সাবিস অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি নিয়ে সিবিআই-এর মামলার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

এই খবর পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল সাবিস-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে আলাদা করে মামলা করে সিবিআই। ২৯ এপ্রিল কোঝিকোড়ে সাবিসের বাড়িতেও হানা দেন সিবিআই অফিসারেরা। ৭ মে তাঁকে প্রথম বার কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়। ওই দিনই নিজাম প্যালেসে সিবিআই অফিসারেরা তাঁকে জেরা করে কিছু তথ্য পান। খতিয়ে দেখা যায়, সাবিসের দেওয়া তথ্য ঠিক। ১৪ মে আবার তাঁকে কলকাতায় ডেকে আনা হয়। সে বারের মতো এ বারও সাবিস চাঁদনির ওই গেস্ট হাউসে এসে ওঠেন।

সূত্রের খবর, গত শনিবারেই নিজাম প্যালেসে সাবিসকে জেরা করেন সিবিআই অফিসারেরা। সূত্রের খবর, সেই সময়ে সিবিআই অফিসারদের সাবিস এমন এক জন ব্যক্তির নাম জানান, যিনি দিল্লিতে এক রাজনৈতিক নেতার আত্মীয়। সাবিসের দাবি অনুযায়ী, বিমা সংস্থার অফিসারদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার একটি বড় অংশ দিল্লির ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ওই রাজনৈতিক নেতাকে ধরে দিল্লির ওই ব্যক্তিই অভিযুক্তদের বাঁচিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। সাবিসের দাবি অনুযায়ী, তিনি শুধু মধ্যস্থতার কাজ করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার জেরার পরে সাবিস ফিরে আসেন চাঁদনির গেস্ট হাউসে। রবিবার তিনি সেখানেই ছিলেন। সোমবার দুপুরে সিবিআই-এর কাছে আবার তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ দিন নির্দিষ্ট সময়ে তিনি সিবিআই-এর নিজাম প্যালেসের অফিসে হাজির না হওয়ায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে ওই গেস্ট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গেস্ট হাউসের কর্মীরা দেখেন, একতলায় সাবিসের ঘরের দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পরেও ভিতর থেকে সাড়া না পেয়ে বৌবাজার থানার পুলিশকে খবর দেন তাঁরা। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে সাবিসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসকেরা সাবিসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার খবর পেয়েই ওই গেস্ট হাউসে আসেন সিবিআই-এর তদন্তকারীরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দিল্লির যে ব্যক্তির নাম সাবিস সিবিআই-কে জানিয়েছিলেন, সে খবর সেই ব্যক্তির কাছেও পৌঁছেছিল। অনুমান করা হচ্ছে, দিল্লি থেকে সেই ব্যক্তি সাবিসকে সরাসরি ফোনে হুমকি দিয়েছেন। তাতেই ভয় পেয়ে সাবিস আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে অনুমান পুলিশের। তদন্তকারীদের কথায়, দিল্লির ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বলে দেওয়ায় তিনি তাঁর ক্ষতি করতে পারেন বলে আশঙ্কা হয় সাবিসের। সেই আশঙ্কা থেকেও তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। পুলিশ জানায়, সাবিসের মোবাইলের কল লিস্ট দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI Murder Chandni Chowk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE