E-Paper

বাজারের হাল কি দেখেও দেখেনি প্রশাসন? প্রশ্ন উঠল খিদিরপুরে

সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা। কেন বাজারের এই অব্যবস্থা পুলিশ তথা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে গেল, তা তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়।

খিদিরপুর বাজারের আগুন নেভাতে দমকলের ইঞ্জিনগুলিকে যেতে হচ্ছে অপরিসর রাস্তা দিয়ে।

খিদিরপুর বাজারের আগুন নেভাতে দমকলের ইঞ্জিনগুলিকে যেতে হচ্ছে অপরিসর রাস্তা দিয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ০৯:২৪
Share
Save

এ যেন রোগীর মৃত্যুর পরে প্রতিষেধকের সন্ধান!

গত চার বছরে কলকাতা পুর নির্বাচন-সহ তিনটি ভোট হয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজার তল্লাটে ভোটের প্রচারে গিয়েছেন শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু বাজারের বাইরে ছোট দোকানিরা ডালা নিয়ে বসায় সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়া রাস্তা চওড়া করা যায়নি। বাজারের ভিতরেও দাহ্য বস্তুর সঙ্গে দোকানগুলির দূরত্ব তৈরি করা যায়নি। সরানো যায়নি বিদ্যুতের তারের জঙ্গল। যার জেরে রবিবার রাতে খিদিরপুর বাজারে লাগা আগুন বিধ্বংসী রূপ নিল খুব দ্রুত। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিপূরণ ও বাজারটি নতুন করে তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন। যদিও অনেকেরই আক্ষেপ, খোলনলচে বদলাতে পদক্ষেপ করা হল ঠিকই, কিন্তু বড্ড দেরিতে। যখন বাজারের প্রায় ১৩০০টি দোকান পুড়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত বহু ব্যবসায়ী।

সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা। কেন বাজারের এই অব্যবস্থা পুলিশ তথা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে গেল, তা তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তবে নগরপাল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে শুধু বলেন, ‘‘কেন আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ রবিবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি দেবলীনা বিশ্বাস সোমবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জানান, ওই বাজারটি দু’বছর আগে হাতে পেয়েছে কলকাতা পুরসভা। তার আগে সেটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের অধীনে ছিল। যদিও পুরসভায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারটি চার বছর আগে অধিগ্রহণ করেছে তারা। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা চাওয়া সত্ত্বেও ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী দোকানের মালিকানার তথ্য পুরসভাকে দেননি। প্লাস্টিক এবং ডালা নিয়ন্ত্রণের কাজেও ব্যবসায়ীরা অসহযোগিতা করেছেন বলে জানান বাজার বিভাগের মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববি।

বহু পুরনো অরফ্যানগঞ্জ বাজারের আশপাশে ঘুরে এ দিন নাগরিক সুরক্ষার প্রশ্নে প্রশাসনের উদাসীনতার ছবিটাই বারংবার দেখা গিয়েছে। ২০১৮ সালে মধ্য কলকাতার বাগড়ি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, দাহ্য বস্তুর ডালা নিয়ে ওই বাজারের মুখ আটকে ব্যবসায়ীদের ভিড়। এ দিন খিদিরপুরে কার্যত সেই দৃশ্যই চোখে পড়ল। বাজারের বাইরের রাস্তা জুড়ে ত্রিপল টাঙিয়ে বসেছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। সর্বত্র ছড়িয়ে ত্রিপল, প্লাস্টিক, থার্মোকল। দমকলের গাড়ির আসা-যাওয়ার মতো পরিসর নেই। বাজারের ভিতরে মুদিখানা থেকে শুরু করে মাখন, ভোজ্য তেলের ব্যবসা চলছে পাশাপাশি। দমকলের প্রাথমিক ধারণা, এ দিন মাখনপট্টি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেল, বহু ব্যবসায়ী রাতে দোকানে থাকার জন্য লোকজনের থেকে ভাড়া নেন। সেই সব ভাড়াটের দোকান রয়েছে বাজারের বাইরে। তাঁরা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, মেদিনীপুরের মতো এলাকা থেকে এসে অরফ্যানগঞ্জে ব্যবসা করেন। রাতে তাঁরা অন্যের দোকানে থাকেন। সেখানে বিপজ্জনক ভাবে গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করেন। মুখ্যমন্ত্রীকেও এ দিন বলতে শোনা যায়, ‘‘সিলিন্ডার রাখলেও এক বার পরীক্ষা করে নেবেন সেটি ঠিক আছে কিনা।’’

এ দিন বাজারে আগুন লাগার পরে বেশ কয়েকটি সিলিন্ডারও ফাটে। মগরাহাটের বাসিন্দা রফিক লস্কর বলেন, ‘‘আমি তিন হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে রাতে একটি দোকানে থাকি। আগুন দেখে কোনও মতে বেরিয়ে আসি। কয়েক জন ব্যবসায়ীর টাকা আমার কাছে ছিল। প্রায় ৪০ হাজার টাকা পুড়ে গিয়েছে।’’ ফলে প্রশ্ন ওঠে, যেখানে মানুষের সুরক্ষার প্রশ্ন, সেখানে কেন কঠিন হবে না প্রশাসন? কলকাতায় অতীতেও একাধিক বাজারে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘খিদিরপুর বাজারে শিবির করা হয় কাগজপত্র জমা নিতে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী পুরসভার সঙ্গে সহায়তা করেননি। ১৩১০ জন ব্যবসায়ীর মধ্যে ৬০ শতাংশই নথিপত্র জমা দেননি।’’

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ অবশ্য এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে অন্তর্ঘাত দেখছেন। নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না করেও ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ী সৌরেন্দ্রনাথ মাজির দাবি, ‘‘আগুন লাগানো হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করার পরে পুর সচিবের ঘরে বাজার, সচিবালয়, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকেরা মিলে বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে একটি রূপরেখা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে আজ, মঙ্গলবার পুরসভার ন’নম্বর বরো অফিসে একটি বৈঠক হবে। আধিকারিকেরা জানান, ব্যবসায়ীদের মালিকানা যাচাই করতে দ্রুত সমীক্ষার কাজ শুরু হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Accident

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।