Advertisement
E-Paper

ওষুধ-অক্সিজেন থেকে প্লাজ়মা, আক্রান্তদের পাশে করোনাজয়ীরা

ওঁদের কারও বয়স ষাটের উপরে, কেউ আবার চল্লিশের দোরগোড়ায়। কারও কারও আবার তারও কম।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ০৬:১৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

করোনাকে হারিয়ে কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন দিন কুড়ি আগে। কেউ বা খানিকটা বেশি।

ওঁদের কারও বয়স ষাটের উপরে, কেউ আবার চল্লিশের দোরগোড়ায়। কারও কারও আবার তারও কম। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দিন-রাত এক করে করোনা রোগীদের সাহায্য করে চলেছেন ওঁরা। কখনও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন আক্রান্তের বাড়িতে, কখনও বা তাঁদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার। এমনকি, প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলছেন ওঁরা, নিজেদের উদ্যোগে। শুধু তা-ই নয়, প্লাজ়মা দান করতেও ছুটে বেড়াচ্ছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। হরিদেবপুর, বেহালা, কলেজ স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন এলাকার করোনাজয়ীরা এ ভাবেই এখন পাশে দাঁড়াচ্ছেন শহরের করোনা আক্রান্তদের।

কেউ কাজ করছেন কোনও সংগঠনের মাধ্যমে, কেউ আবার কয়েক জন বন্ধুকে জুটিয়ে নিয়ে নিজেরাই বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। নিজেদের করোনা জয়ের অভিজ্ঞতাকে সম্বল করেই শহরের করোনা আক্রান্তদের সাহায্যে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন ওঁরা। দিন-রাত কোনও বিরাম নেই। ফোন বেজে চলেছে অনবরত। ও-পাশ থেকে কাতর স্বরে ভেসে আসছে সাহায্যের আর্তি। কারও প্রয়োজন ওষুধ, কারও দরকার অক্সিজেন, কারও বা অ্যাম্বুল্যান্স। সকাল থেকে রাত— আক্রান্তদের সাধ্যমতো সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছেন ওঁরা।

গত কয়েক মাসে নিজেরাই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত এই সমস্ত মানুষ। করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরেই তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন অন্য আক্রান্তদের সাহায্য করতে। মাসখানেক আগে শুরু হয় সেই উদ্যোগ। তার পর থেকে থেমে থাকেননি ওঁরা। হরিদেবপুরের তৃণাঞ্জয়, তীর্থ, জয়ন্ত, সুপ্রিয়রা অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো করোনা রোগীদের হাসপাতালেও পৌঁছে দিচ্ছেন। হরিদেবপুর এলাকার ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে এ ভাবেই পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তৃণাঞ্জয় ভট্টাচার্য ও তাঁর বন্ধুরা।

বুধবার তৃণাঞ্জয় বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকেই এ বছর নানা সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। পঁচিশে বৈশাখের আগে বন্ধুরা সকলে মিলে ঠিক করি, নিজেদের করোনা জয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অন্যদের সাহায্য করব। সেই ভাবনা থেকেই কাজ শুরু। আপাতত আমরা হরিদেবপুর ও টালিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের করোনায় আক্রান্তদের অক্সিজেন, ওষুধ, খাবার থেকে শুরু করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া— সবটাই করছি নিজেদের উদ্যোগে।’’

কলেজ স্ট্রিট এলাকাতেও একই ভাবে করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কোভিডজয়ী সমীর, দিব্যেন্দু, দীপঙ্কর, শামসুলরা। তাঁদের মধ্যে সমীরকুমার চৌধুরী বললেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করি। করোনার সংক্রমণ বাড়তেই আমরা সকলে মিলে কিছু করতে উদ্যোগী হই। নিজেদের করোনা জয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সংক্রমিতদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’’

বেহালার বাসিন্দা সুদীপ্ত ও তাঁর বন্ধুরা আবার হাসপাতালে ভর্তি থাকা করোনা আক্রান্তদের প্লাজমা দিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সুদীপ্ত বললেন, ‘‘আমরা যে হেতু প্রত্যেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম, তাই বন্ধুরা মিলে চেষ্টা করছি, প্লাজ়মা দিয়ে সঙ্কটজনক করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়াতে। এ ছাড়া, বাড়িতে থাকা করোনা আক্রান্তদের জন্য অক্সিজেন, ওষুধ জোগাড় করা থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ— সবই করছি।’’

এঁদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পেয়েছিলেন। কারও কারও আবার তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে। সেই কারণে এঁরা সকলেই চান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কারও যেন নিজেকে অবহেলিত বলে মনে না হয়।

COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy