ফুটপাথে ‘বেআইনি দখলদার’ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের পর এ বার রাতের ফুটপাথবাসীদের জন্য বিকল্প বন্দোবস্ত করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। গত সপ্তাহে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর শহর কলকাতায় হকার নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন অ্যাপ চালু করে সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এরই মাঝে রাতের ফুটপাথে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দাদের জন্য কলকাতা পুরসভার তৈরি আশ্রয় শিবিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন পুর আধিকারিকেরা। শহরের ফুটপাথ এবং ব্রিজের নীচের অংশ দখল করে থাকেন ফুটপাথবাসীরা। পার্ক সার্কাস, শিয়ালদহ, রাজাবাজার, বালিগঞ্জ, বেহালা, গড়িয়াহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় শহরের ফুটপাথ জুড়ে বহু গৃহহীন মানুষ ঝুপড়ি বানিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বাঁশ-কাঠের ঘরও বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এই সবের কোনও আইনি বৈধতা নেই। কলকাতার পুর আইন অনুযায়ী এই বাসিন্দারাও ‘দখলদার’-এর আওতাতেই পড়েন। তাই এ বার রাতের এই ফুটপাথের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে রাতের ফুটপাথ পরিচ্ছন্ন রাখাই লক্ষ্য পুরসভা কর্তৃপক্ষের।
আরও পড়ুন:
বর্তমানে কলকাতা পুরসভার ১১টি রাতের আশ্রয় শিবির রয়েছে। তাঁদের আপাতত সেখানেই পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করা হবে। শারদোৎসবের আগে কলকাতার ফুটপাথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে এই কাজ শুরু হয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতায় আরও দু’টি রাতের আশ্রয় শিবির তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। কলকাতা পুরসভার সমাজ কল্যাণ বিভাগ সূত্রে খবর, টালিগঞ্জের গান্ধী কলোনি এবং উত্তর কলকাতার মুরারি পুকুরে দু’টি রাতের আশ্রয় শিবির চালু হবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। সঙ্গে কলকাতায় চালু থাকা অনেক রাতের আশ্রয় শিবিরে ফুটপাথের স্থায়ী বাসিন্দাদের জায়গা খালি রয়েছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে তুলে ফুটপাথবাসীদের সেখানে রাখা হতে পারে। তবে গত কয়েক বছরে কলকাতার রাতের ফুটপাথবাসীদের চরিত্রগত বদল এসেছে বলেই জানাচ্ছে কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র। আগে ফুটপাতে থাকতেন মূলত র্যাগ পিকার্স (কাগজকুড়ানি)-রা। বর্তমানে তাঁদের সঙ্গে ‘স্ক্র্যাপ সেলার’দের (যাঁরা লোহালক্কড় বিক্রি করেন) সংগঠিত সিন্ডিকেটের সদস্যেরা ফুটপাথবাসী হিসাবে রাতের অন্ধকারে নিজেদের ব্যবসা চালাচ্ছেন বলেই অভিযোগ। ‘স্ক্র্যাপ সেলার’দের সংগঠিত সিন্ডিকেটের সদস্যরা র্যাগ পিকার্সদের সঙ্গে এমন ভাবে মিশে গিয়েছেন যে, তাঁরে পৃথক করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে কলকাতা পুরসভায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কলকাতার রাস্তায় অদ্ভুত ভাবে পরিবার নিয়ে কিছু কিছু মানুষ থাকছেন। আগে ফুটপাতে থাকতেন র্যাগ পিকার্সরা (কাগজকুড়ানি)। তাঁদের রাতে থাকা খাওয়ার ও অসুখ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাটাও আমাদের কাজের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু আমি নিজে গাড়ি থেকে নেমে খোঁজ নিয়েছি, এঁরা র্যাগ পিকার্স নন, এঁরা স্ক্র্যাপ সেলার (যাঁরা লোহালক্কড় বিক্রি করেন)। এঁরা সংগঠিত গ্রুপ।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘রাতেই এঁদের কাজকর্ম হয়। স্ক্র্যাপ লোডিং আনলোডিং হয়। সেই কাজের জন্য তাঁরা রাতের বেলা ফুটপাত দখল করে শুয়ে থাকেন। আমি কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেব যে, এঁদের ফুটপাথ থেকে তুলে যাতে রাতের আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফুটপাথ দখল করে কোনও ভাবেই ব্যবসা করা যাবে না।’’ এই সুযোগে কলকাতা পুরসভা রাতের ফুটপাথ থেকে ‘স্ক্র্যাপ সেলার’ তৈরি হওয়া সিন্ডিকেট ভাঙতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, মেয়র স্বয়ং রাস্তায় নেমে এই চক্রের সন্ধান পেয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরেই কলকাতা পুরসভার অন্দরে এই সিন্ডিকেট কী ভাবে ভাঙা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছিল। আর মুখ্যমন্ত্রী ফুটপাথ দখলদারমুক্ত করার দাওয়াই দিতেই ‘স্ক্র্যাপ সেলার’ সিন্ডিকেট পাকাপাকি ভাবে উৎখাত করতে চাইছে কলকাতা পুরসভা।