Advertisement
০২ মে ২০২৪
Road Accident

দুর্ঘটনার পরে সাহায্য মিলল না, মৃত্যু দুই কিশোরের

রাতে হরিদেবপুর থানার জুলপিয়া রোডের মল্লিকপুরে গাছে ধাক্কা মারায় মৃত্যু হয়েছে দুই স্কুটি আরোহীর। জখম এক জন। মৃতদের নাম জিৎ সর্দার (১৬) ও আকাশ প্রামাণিক (১৭)। জখম মঙ্গল রায় (১৬)।

দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে চটি। বৃহস্পতিবার, হরিদেবপুরের মল্লিকপুরে।  (ইনসেটে) মৃত: জিৎ সর্দার ও আকাশ প্রামাণিক।

দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে চটি। বৃহস্পতিবার, হরিদেবপুরের মল্লিকপুরে। (ইনসেটে) মৃত: জিৎ সর্দার ও আকাশ প্রামাণিক। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৭
Share: Save:

দুর্ঘটনার পরে রাস্তায় পড়ে আছে গুরুতর জখম তিন কিশোর। তাদেরই এক জনের দিদি ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাহায্যের আশায় থামানোর চেষ্টা করছেন কোনও একটি গাড়িকে। কিন্তু কেউ থামল না। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউ এগিয়েও এলেন না। উল্টে, তাঁকে এগিয়ে যেতে দেখে বাধা দিয়ে বলা হল, ‘‘আগে পুলিশ আসুক।’’ এমনই অভিযোগ ওই তরুণীর।

বুধবার রাতে হরিদেবপুর থানার জুলপিয়া রোডের মল্লিকপুরে গাছে ধাক্কা মারায় মৃত্যু হয়েছে দুই স্কুটি আরোহীর। জখম এক জন। মৃতদের নাম জিৎ সর্দার (১৬) ও আকাশ প্রামাণিক (১৭)। জখমের নাম মঙ্গল রায় (১৬)। জিৎ, আকাশ ও মঙ্গল বন্ধু ছিল। বৃহস্পতিবার বাঁশদ্রোণীর নিউ শিবতলা ফোর্থ লেনের ভাড়াবাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে মঙ্গলের দিদি জ্যোতি রায় বললেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি ও আমার স্বামী স্কুটি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছই। বার বার হাত দেখালেও কোনও গাড়ি থামেনি। উপস্থিত লোকজনও এগিয়ে আসেননি। বরং আমরা এগিয়ে গেলে বলা হয়, ‘‘আগে পুলিশ আসুক। না হলে গাড়ি নিয়ে এসে তিন জনকে নিয়ে যান।’’ জ্যোতির দাবি, ‘‘এর পরে আমরা ফিরে এসে একটি ক্যাব নিয়ে আবার ঘটনাস্থলে যাই। তত ক্ষণে হরিদেবপুর থানার পুলিশও সেখানে চলে এসেছে। ওদের বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’’

এই ঘটনার প্রসঙ্গে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এটা কলকাতার চরিত্র নয়। এমন ঘটনা ঘটলে মানুষ সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এটিকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছি। এর জন্য পুরো শহরটাকে হৃদয়হীন বলতে পারব না। অনেক সময়ে পুলিশি ঝামেলা এড়াতেও অনেকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন না।’’ তবে নাবালক কেন স্কুটি চালাবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন সাহিত্যিক। তাঁর কথায়, ‘‘এটা ঠিক কাজ হয়নি।’’ মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল বললেন, ‘‘মানুষ যত বেশি শহরকেন্দ্রিক হচ্ছে এবং পশ্চিমী সভ্যতা ও স্মার্টফোনের ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে পড়ছে, ততই আরও বেশি করে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এটা তারই লক্ষণ।’’

পুলিশি সূত্রের খবর, তিন বন্ধু বুধবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ স্কুটিতে নেপালগঞ্জের ওএনজিসি মোড় থেকে ফিরছিল। স্কুটি চালাচ্ছিল জিৎ। বেপরোয়া গতিতে আসা স্কুটিটি মল্লিকপুরে রাস্তার ধারের গাছে ধাক্কা মারে। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। জখম তিন জনকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জিৎকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সঙ্কটজনক আকাশকে সেখান থেকে নেওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে তাকেও মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। মঙ্গলকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জিতের বাড়ি রিজেন্ট পার্কের পূর্ব পুটিয়ারিতে। বাবা সুজিত সর্দার অটোচালক। এ দিন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। আকাশের বাড়ি বাঁশদ্রোণী থানার পিরপুকুর রোডে। তাদেরও বাড়িতে কেউ ছিলেন না। বাড়িওয়ালি শিখা সাহা বলেন, ‘‘পরিচারিকার কাজ করে তিন ছেলেকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছিলেন আকাশের মা বীণা। আকাশ মেজো ছেলে। কাপড়ের দোকানে কাজ করত।’’

জ্যোতি জানিয়েছেন, মঙ্গলের ডান হাতে ও গলায় আঘাত লেগেছে। তাঁর বাবা নিখিল রায় কালীঘাটে মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। ওই তরুণী জানান, বুধবার রাত দশটা নাগাদ মঙ্গলের আর এক বন্ধুর স্কুটি নিয়ে মঙ্গল, জিৎ ও আকাশ বেরিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘যাওয়ার সময়ে আকাশ স্কুটি চালাচ্ছিল। ওরা জিতের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। সাড়ে ১১টা নাগাদ আমি ভাইকে ফোন করলে ঘটনার কথা জানতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident haridebpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE