Advertisement
E-Paper

ওয়াকফ সম্পত্তি জরিপ করবে কর রাজস্ব বিভাগ, পুর আয় কমার শঙ্কা

ওয়াকফ সম্পত্তি বাঁচাতে মাস তিনেক আগে হাই কোর্ট পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল, শহর কলকাতার যেখানে যত ওয়াকফ সম্পত্তি আছে, সেগুলি জরিপের (সার্ভে) কাজ শেষ করতে হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৭
representational image

—প্রতীকী ছবি।

এ যেন ‘শ্যাম রাখি, না কুল’! শহরে থাকা ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মানতে গিয়ে এমনই অবস্থার মধ্যে পড়েছেন কলকাতা পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকেরা।

ওয়াকফ সম্পত্তি বাঁচাতে মাস তিনেক আগে হাই কোর্ট পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল, শহর কলকাতার যেখানে যত ওয়াকফ সম্পত্তি আছে, সেগুলি জরিপের (সার্ভে) কাজ শেষ করতে হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। আর সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে ঘাম ছুটেছে কর রাজস্ব বিভাগের কর্মীদের। কার্যত লাটে উঠতে বসেছে বিভাগের মূল কাজ, অর্থাৎ, সম্পত্তিকর-সহ বিভিন্ন কর আদায়। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার আয়ের মূল উৎস সম্পত্তিকর। চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে আর চার মাস বাকি। এই সময়ে সম্পত্তিকর আদায়ে বেশি করে জোর দেন বিভাগীয় ইনস্পেক্টরেরা। কিন্তু এক দিকে ইনস্পেক্টর কম, অন্য দিকে ওয়াকফ সম্পত্তির বিষয়ে নজর দিতে গিয়ে কর আদায়ের ক্ষেত্রে আর এগোতে পারছেন না তাঁরা। কর রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সবই আমাদের করতে হচ্ছে। ফলে আসল কাজটা মার খাচ্ছে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছরের তুলনায় এখনও পর্যন্ত সম্পত্তিকর আদায় বাড়লেও আগামী চার মাসে আয় কতটা বাড়বে, তা নিয়ে সন্দিহান পুরকর্তারাই।

শুধু কর আদায় করাই নয়। ঠিকা জমিতে নতুন করে বাড়ি তৈরির বিপুল সংখ্যক আবেদনপত্র জমা পড়েছে পুরসভায়। সেই সব আবেদনপত্র যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকা জমি পরিদর্শনের বাড়তি দায়িত্ব পড়েছে কর রাজস্ব বিভাগের কর্মীদের উপরেই। এরই সঙ্গে মেয়রের নির্দেশ অনুযায়ী, শহরের সমস্ত পুকুর জরিপের কাজও করতে হচ্ছে তাঁদের। বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এত সব দায়িত্ব পালনের পরে ওয়াকফ সম্পত্তি জরিপের কাজও দেখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা।’’

উল্লেখ্য, কলকাতায় থাকা বিভিন্ন ওয়াকফ সম্পত্তি দিনে দিনে দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এমন সম্পত্তি ফিরে পেতে সেগুলির জরিপের কাজ শেষ করার আবেদন জানিয়ে আগেই হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন টিপু সুলতানের প্রপৌত্র তথা মাইসোর ফ্যামিলি ওয়াকফ এস্টেটের সম্পাদক শাহিদ আলম। অগস্টে সেই মা‌মলার শুনানিতে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে সরকার তথা পুরসভার ভূমিকায় তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, ছ’মাসের মধ্যে শহরের ওয়াকফ সম্পত্তি জরিপের কাজ শেষ করতে ২০১৭ সালেই পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। কিন্তু সেই কাজ আজ পর্যন্ত হয়নি। পরে আবার ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষার আর্জি জানিয়ে মামলা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ, শহরের ১-১০০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় থাকা ওয়াকফ সম্পত্তি জরিপের কাজ করবে কলকাতা পুরসভা। যদিও যে পদ্ধতিতে কাজ হচ্ছে, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত নিযুক্ত ওয়াকফের সার্ভে কমিশনার তথা বিশেষ পুর কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন শাহিদ।

তাঁর অভিযোগ, ‘‘টালিগঞ্জের সতীশ মুখার্জি রোডে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে টিপু সুলতানের পরিবারের কবর রয়েছে। ওই জায়গাটি গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ তালিকাভুক্ত। সেটি দখল হয়ে গিয়েছে। পুরকর্মীরা সেখানে গেলেও জরিপের কাজ হয়নি। এমন অনেক জায়গায় তাঁরা গিয়ে নাম-কা-ওয়াস্তে ঘুরে আসছেন।’’ অভিযোগ প্রসঙ্গে কর রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মোতায়াল্লির অসহযোগিতায় বেশ কিছু ওয়াকফ সম্পত্তি জরিপের কাজ করা যাচ্ছে না।’’ পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশ মানতে আমরা বাধ্য। এটা ঠিকই যে, কর রাজস্ব বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকদের বেশি পরিশ্রম হচ্ছে। তবে এর জন্য কর আদায়ে ঘাটতি হবে না বলেই আশা করছি।’’

KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy