Advertisement
E-Paper

বর্বর গৃহকর্তা! অসুস্থ বৃদ্ধা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে খুঁজছেন আত্মীয়ের হাত

মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে ওই পরিচারিকার হাতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লেখা একটা কাগজ ধরিয়েই তিনি তাঁকে ফেলে চলে আসেন গৃহকর্তা। তার পর...

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:১৭
অসহায় পরিচারিকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

অসহায় পরিচারিকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

বেশ কিছু দিন ধরেই শরীরটা খারাপ। তাই, ঠিক করে বাড়ির কাজ করতে পারছিলেন না। কিন্তু, বাড়ির পরিচারিকার এই কাজ না করাটা মানতে অসুবিধা হচ্ছিল গৃহকর্তার। আবার বাড়িতে অসুস্থ মানুষকে ফেলে রাখাও ঠিক নয়। তাই, বৃদ্ধা পরিচারিকাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে ওই পরিচারিকার হাতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লেখা একটা কাগজ ধরিয়েই তিনি তাঁকে ফেলে চলে আসেন। পরে জানা যায়, সেই কাগজে লেখা সব তথ্যই আসলে ভুয়ো!

এর পর কোনও রকমে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ষাটোর্ধ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। যে নাম-ঠিকানা-ফোন নম্বর দেখিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানে হাসপাতালের তরফে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, সবটাই ভুয়ো। তাই দিন দুয়েক পর ওই প্রৌঢ়াকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনটাই অভিযোগ ওই বৃদ্ধার। এর পর থেকেই সন্ধ্যা দেবীর ঠাঁই হয় মেডিক্যাল কলেজের ইডেন বিল্ডিং-এর সামনে।

আরও পড়ুন: নিয়ম ভেঙে উল্টে চালককেই হেনস্থা

সহায়-সম্বলহীন এক বৃদ্ধা অসুস্থ অবস্থায় ইডেন বিল্ডিং-এর সামনে পড়ে রয়েছে বলে খবর যায় বৌবাজার থানায়। বুধবার গভীর রাতে পুলিশ স্বতপ্রণোদিত ভাবে ওই প্রৌঢ়াকে মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি করে। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে সন্ধ্যাদেবীর। বৌবাজার থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে ইডেন বিল্ডিং-এর সামনে পড়ে থাকতে দেখে আমরা তাঁকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। তাঁকে ভর্তি করে নেন চিকিৎসকেরা। তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, ওই বৃদ্ধার পাড়ির লোকজন এবং যেখানে তিনি কাজ করতেন, তাঁদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।’’

পুলিশের কাছে ওই বৃদ্ধা দাবি করেছেন, তাঁর বাড়ি ঝাড়গ্রামে। তিনি কলকাতার মানিকতলার কাছে অমিত চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। অমিতবাবুর স্ত্রীর নাম রেশমি চক্রবর্তী। কিন্তু, হাসপাতালে ছেড়ে দিয়ে যাওয়ার সময় যে কাগজ তাঁর হাতে অমিতবাবু ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাতে অন্য নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লেখা ছিল। পুলিশ এখন অমিত চক্রবর্তীদের খোঁজ করছে।

আরও পড়ুন: জলের ট্যাঙ্কারের সঙ্গে ধাক্কা, অল্পের জন্য রক্ষা বিমানের

পাশাপাশি, হাসপাতালের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিক পরীক্ষার পর হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ওই বৃদ্ধার গলব্লাডারে পাথর হয়েছে। তাঁর দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তা হলে কেন দু’দিন ভর্তি রেখেই ওই বৃদ্ধাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল? বৃদ্ধা আরও অভিযোগ করেছেন, ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি হাসপাতালের কর্মীদের কাছে বার বার অনুরোধ করেছিলেন, তাঁকে ফের ভর্তি করে নেওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁকে বলা হয়েছিল, বাড়ির লোককে নিয়ে আসতে হবে। তার পর ভর্তি এবং চিকিৎসা করা হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা দেবী বলেন, ‘‘এই শরীর নিয়ে একা একা ঝাড়গ্রামে যেতে পারতাম না। তাই এখানেই এ ক’দিন শুয়ে ছিলাম। কাল পুলিশ এসে আমাকে ভর্তি করেছে।’’

আরও পড়ুন: দু’পক্ষের মারামারিতে কান কাটল কাউন্সিলর ‘ঘনিষ্ঠের’

ঘটনার কথা পৌঁছেছে স্বাস্থ্য দফতরেও। ওই বৃদ্ধার যাতে অবিলম্বে চিকিৎসা হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কোনও অস্ত্রোপচার করতে হলে আত্মীয়-পরিজনদের সম্মতি দরকার হয়। ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

Kolkata Medical College কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy