Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
State news

জল থইথই থানায় জবুথবু পুলিশ, লক আপের বদলে আসামীর ঠাঁই বেঞ্চে

পা নীচে করার উপায় নেই। তলায় মেঝেতে হাঁটুর উপর জল। থানার সেন্ট্রির হালও তথৈবচ। হাঁটুর উপর প্যান্ট গুটিয়ে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এ দিকে থানার মধ্যে নদী বইছে।

জলের মধ্যেই বিধাননগর কমিশনারেটের এয়ারপোর্ট থানায় কাজ চলছে।

জলের মধ্যেই বিধাননগর কমিশনারেটের এয়ারপোর্ট থানায় কাজ চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ১৪:৩৪
Share: Save:

কাঠের চেয়ারের উপর উবু হয়ে বসে টেবিলে রাখা খাতায় কোনও মতে লিখে চলেছেন এক পুলিশ অফিসার। পা নীচে করার উপায় নেই। তলায় মেঝেতে হাঁটুর উপর জল। থানার সেন্ট্রির হালও তথৈবচ। হাঁটুর উপর প্যান্ট গুটিয়ে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এ দিকে থানার মধ্যে নদী বইছে।

সেই জলে সব কিছুই ভাসছে। বুধবার রাত থেকে এমনই হাল বিধাননগর কমিশনারেটের এয়ারপোর্ট থানার। রাতে বৃষ্টির তেজ বাড়তেই জল বাড়তে থাকে। সেই জল রাস্তা ছাপিয়ে প্রথমে ভাসিয়ে দেয় থানার ব্যারাক। রাতেই ব্যারাকের পুলিশকর্মীদের মালপত্র কোনও মতে চেয়ার টেবিল বা বিছানায় রেখে রাতভর না ঘুমিয়েই কাটাতে হয়।

তত ক্ষণে ব্যারাক ছাড়িয়ে জল ঢুকে গিয়েছে থানার অন্দরেই। ডিউটি অফিসারের ঘর ভাসিয়ে আইসি-র ঘর, তাঁর কোয়ার্টার্স, সর্বত্রই জল থইথই। রাতভর পুলিশকর্মীরা ব্যস্ত নথিপত্র সামলাতে, যাতে সেই কেস ডায়েরি নষ্ট না হয়।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণাবর্ত আর মৌসুমী অক্ষরেখার জোড়া ফলায় ভাসছে দক্ষিণবঙ্গ, বৃষ্টি আরও তিন দিন

জল থইথই থানার লক আপেও। সেই জমা জলে তো আসামীকে বসিয়ে রাখা যায় না। তাই তাদের জায়গা ডিউটি অফিসারের সামনের বেঞ্চে। ব্যারাকে জল। তাই সকালে থানার মেসের হেঁশেলও বন্ধ। থানার শৌচাগারও জলের তলায়। তাই সে দিকেও পা বাড়ানোর উপায় নেই পুলিশকর্মীদের।

কিন্তু যা-ই হোক না কেন, থানার কাজ তো বন্ধ করা যাবে না। রাস্তার পেট্রল ডিউটিও করতে হবে, সেই সঙ্গে আসামীকে কেস ডায়েরি লিখে আদালতেও পাঠাতে হবে। তাই চেয়ারের উপর উবু হয়ে বসেই চলছে থানার কাজ। আর ডিউটির ফাঁকে যে যার মতো আশেপাশের হোটেলে গিয়ে সেরে নিচ্ছেন প্রাতকৃত্য।

দেখুন ভিডিও:

দু’দফায় এই থানাতে পোস্টিং এক সাব ইনস্পেক্টরের। তিনি বলেন, “আগে এই থানাতে জল জমত না। গত বছর থেকে এই জল জমা শুরু হয়েছে। তবে এ বছরের মতো মারাত্মক হাল কখনও হয়নি।”

সকালেই এই হাল দেখে থানার আইসি এয়ারপোর্ট অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু জমা জল বের করতে তারা খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি। এক পুলিশ অফিসার বলেন, “আসলে থানার বাড়ি এবং চত্বরটা এয়ারপোর্ট অথরিটির জায়গায়। তাই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাঁদের।” তাই দায়িত্ব নেই দমদম পুরসভারও। শেষ পর্যন্ত পুলিশকর্তাদের দমকলের দ্বারস্থ হতে হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন থানার সামনে জল পাম্প করে বের করার চেষ্টা করছে।

জলের জেরে চেয়ারের উপর পা তুলে বসে রয়েছেন এক পুলিশ অফিসার।

যদিও এ ভাবে বৃষ্টি চললে সেই জল পাম্প করে কতটা বের করা যাবে সেই নিয়ে সংশয়ে খোদ দমকলকর্মীরাও। তাঁদেরই এক জন বলেন, “জল পাম্প করে কোথায় বের করব? রাস্তাতেও তো জল। নিকাশি নালাও টইটম্বুর। জল যাবে কোথা দিয়ে?”

দমদম পুরসভার কাউন্সিলর বরুণ নট্টের দাবি, মেট্রোর কাজের জন্য নিকাশি নালাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই অনেক জায়গায় জল জমেছে। শুধু বিমানবন্দর এলাকা নয়, ভিআইপি রোডে হলদিরামের কাছে হাঁটু পর্যন্ত জল থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে সকাল থেকেই।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE