রোজনামচা: জানবাজারের অলি-গলি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
যানজট, কোলাহল, ব্যস্ততা নিয়ে আমার পাড়া জানবাজার। এটাই রানি রাসমণির পাড়া। আজও ইট-কাঠ-পাথরে মিশে তাঁর কীর্তি। জানবাজার মোড়ের হলুদ বাড়িটা অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে। এখানে আছে শ্রীরামকৃষ্ণের পদধূলি। তবে আজ প্রাদেশিকতায় আচ্ছন্ন এ পাড়াটা।
জানবাজার অঞ্চলটার এক দিকে রানি রাসমণি রোড মিশেছে লেনিন সরণির ট্রামলাইনে। অন্য দিকে, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড মিশেছে জওহরলাল নেহরু রোডে। সামনেই গোয়ালটুলি লেন। এখন এ পাড়ায় অবাঙালির সংখ্যাই বেশি। হারিয়েছে পাড়ার সেই গন্ধ। চারপাশে শুধুই বাজার। দিনভর চলে বিকিকিনি আর ক্রেতার আনাগোনা।
এ পাড়ায় আমাদের পাঁচ পুরুষের বাস। অনেক পুরনো প্রতিবেশী পাড়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এখনও রয়েছে বর্ধনবাড়ি, দত্তবাড়ি। এখনের অবাঙালি প্রতিবেশীদের সঙ্গেও আছে সুসম্পর্ক। যে কোনও প্রয়োজনে তাঁরা পাশে থাকেন।
এখন পাড়ার সকাল শুরু হয় কোলাহল আর গাড়ির হর্নে। আগে ভোর হতেই নাম সংকীর্তন করতে করতে গঙ্গাস্নানে যেতেন কিছু মানুষ। পরিবেশটা ছিল মায়াময়। অতীতে এ অঞ্চলের আশপাশে বহু অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারের বাস ছিল। তখন বাঙালি-অবাঙালি পরিবারগুলির মধ্যে খেলাধুলোর চল ছিল। সে সব এখন গল্প কথা। আগের থেকে এলাকাটা পরিচ্ছন্ন। নিয়মিত রাস্তা এবং জঞ্জাল সাফাই করা হয়।
এ পাড়ার পুজো মানে রানি রাসমণির বাড়ির পুজো। এখানেই পুজোর সময়ে সখী বেশে প্রতিমা দর্শন করেছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। এক সময়ে রানি রাসমণির বাড়ি থেকে বেরতো রুপোর রথ। পাড়ার কালীপুজোও বিখ্যাত। দশমহাবিদ্যার দশ মূর্তি দেখতে ভিড় হয় এখনও।
ছেলেবেলায় সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে দেখলে পাড়াতুতো কাকা-জ্যেঠারা শাসন করতেন। সিগারেটে সুখটান দিতে পাড়া থেকে দূরে যেতে হত। এ পাড়ায় কোনও দিনও রকের আড্ডা ছিল না। আড্ডা বসত কিছু বাড়ির বৈঠকখানায়। দোকানপাট ছিল কম, গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। স্বাচ্ছন্দ্যে ফুটপাথে হাঁটা যেত। এখন ছবিটা এর বিপরীত।
এক-এক সময়ে মনে হয় এটা মিছিলের পাড়া হয়ে গিয়েছে। যত রাজ্যের মিছিল সব এখান দিয়ে। যার জন্য যানজট লেগেই থাকে। পার্কিং এ পাড়ার আরও একটা সমস্যা। এর জেরে নিজের গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বেরোতে সমস্যা হয় বাসিন্দাদের।
বদলায়নি এ পাড়ার বাঙালি খাবারের স্বাদ। এখানকার এক মিষ্টির দোকান থেকে নিয়মিত দই আর রাবড়ি যেত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ি। সেই দোকানটা আজও আছে। মিষ্টির স্বাদও রয়েছে একই রকম। কাছেই আছে একটি আটপৌরে বাঙালি হোটেল। এখন ভাতের হোটেলে বসে খাওয়ার চল কমলেও এখানকার ভাত-মাছের দর কমেনি। এ পাড়ার বিখ্যাত কচুরির দোকানের টানে এখনও ভিড় জমে। এ সবের টানেও বোধহয় এখানে থেকে যাওয়া যায়!
লেখক আইনজীবী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy