Advertisement
E-Paper

হেলমেট? তা হলে চুলের কায়দা দেখবে কে

কথাগুলো বলছিলেন লেকটাউন-কালিন্দী অঞ্চলের রাহুল বর্মণ। এই কলেজপড়ুয়া বাইক ছাড়া এক পা-ও নড়েন না। কিন্তু বাড়িতে রোজ অশান্তি, হেলমেট না-পরা নিয়ে। পুলিশও বহু বার সতর্ক করেছে।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৭
চুলের কায়দা বাঁচাতে ব্রাত্য হেলমেট। উল্টোডাঙায়। ছবি: শৌভিক দে

চুলের কায়দা বাঁচাতে ব্রাত্য হেলমেট। উল্টোডাঙায়। ছবি: শৌভিক দে

‘‘বাহারি রঙিন চুল তো আঙ্কেল! ‘ওটা’ মাথায় দিতে ভাল লাগে না। কত খরচ করে করা বলুন তো? রোজ কত যত্ন করে চুলটা বাঁচিয়ে রাখতে হয়। ‘ওটা’ পরলে তো সব ঢেকেই গেল!’’

কথাগুলো বলছিলেন লেকটাউন-কালিন্দী অঞ্চলের রাহুল বর্মণ। এই কলেজপড়ুয়া বাইক ছাড়া এক পা-ও নড়েন না। কিন্তু বাড়িতে রোজ অশান্তি, হেলমেট না-পরা নিয়ে। পুলিশও বহু বার সতর্ক করেছে। বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর জন্য বেশ কয়েক বার জরিমানাও দিয়েছেন। হেলমেট পরা যে জরুরি তা তিনিও মানেন। কিন্তু চুলের ফ্যাশন রক্ষা করার ব্যাপারটাও তো ফেলে দেওয়ার মতো নয়!

শহরে এমন রাহুলের সংখ্যা কম নয়। এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করা হলেও, এক শ্রেণির বাইকচালক হেলমেট ছাড়াই উদ্দাম গতিতে বাইক চালাতে পছন্দ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই চুলের স্টাইল নষ্ট হয়ে যাবে বলে হেলমেট পরছেন না। ধরা পড়লে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু তাতে কী! সল্টলেকের ত্রিদিব মিত্র, যাদবপুরের প্রদীপ মিশ্র, পার্ক সার্কাসের আলাউদ্দিন শেখ বা প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ঝন্টু সেনগুপ্ত— প্রত্যেকেই দামি, আধুনিক বাইক চালান। সকলেরই বাহারি চুল। ফুটবলার, ক্রিকেটার, বা নায়ককে নকল করে নামি-দামী সেলুনে গিয়ে চুল কেটেছেন ওঁরা। তাতে হলদে-সবুজ-মেরুন রংও রয়েছে। ওঁদের প্রশ্ন, হেলমেট পরলে সে সব কে দেখবে!

একই কথা আরোহী হিসেবে পিছনের বসা মহিলাদের একাংশেরও। কয়েক হাজার টাকা দিয়ে চুল ‘মেনটেন’ করা সায়নী সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে বাইকে ঘোরার মজাই আলাদা। কিন্তু হেলমেট পরে চুল নষ্ট করার প্রশ্নই ওঠে না!’’

সম্প্রতি কলকাতায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় কয়েক জন যুবকের মৃত্যু হয়েছে হেলমেট না থাকায়। ইদানীং পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচারে চুলের স্টাইল বজায় রেখেও হেলমেট পরার কথা বলা হচ্ছে।

প্রদীপ বা ঝন্টুদের প্রশ্ন, ‘‘হেলমেট পরে যদি চুলের ফ্যাশন ঢেকেই ফেলব, তা হলে আর এত কষ্ট কেন! চেহারা, গায়ের রঙ, চুল সব কিছুর সঙ্গে ‘ম্যাচ’ করেই তো বাইক চালানো!’’ রাহুল, ত্রিদিবদের সঙ্গে শুধু ট্র্যাফিক পুলিশের নয়, হেলমেট না পরার জন্য বাড়িতেও বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হয়।

ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেকেই বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে বেরোনোর সময় হেলমেট নিয়ে পরলেও, পরে খুলে দেয়। উদ্দাম গতিতে ‘রোমিওগিরি’ দেখাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এঁদের মধ্যে অনেকেই।

কেশসজ্জার একটি সর্বভারতীয় সংস্থার হয়ে কলকাতায় কর্মরত হেয়ার স্টাইলিস্ট অক্ষয় প্রামাণিকেরও অভিজ্ঞতা, অল্পবয়সি ছেলেরা আকছার হেয়ার জেল বা হেয়ার ওয়্যাক্সের মতো প্রসাধনী দিয়ে চুলের ফ্যাশন করেন। অক্ষয় বলেন, ‘‘এই প্রসাধন ও হেলমেট— দু’টো একসঙ্গে চলে না। চুলে এ সব মাখলে ঘাম বেশি হয়। তখন হেলমেট পরলে সমস্যা বাড়ে। কেউ বাইক চালালে এ সব মাখতে বারণ করি আমরা।’’ তবে চুলের ফ্যাশনের জন্য হেলমেট না পরার বিষয়টা তাঁরা একেবারেই সমর্থন করেন না বলে জানান তিনি।

আর এক সংস্থার হেয়ার স্টাইলিস্ট মহম্মদ আফতাব বলছেন, ‘‘চুলে কার্ল, ব্লো-ড্রাই, স্পাইক যা-ই করান না কেন, হেলমেট পরলে তা নষ্ট হবেই।’’ তাঁর মতে, হেয়ারস্টাইল করার শখ থাকলে বাইক এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। বাইক অপরিহার্য হলে, সে ক্ষেত্রে নিত্যনতুন স্টাইল না করাই ভাল। তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাশনের চেয়ে জীবনের ঝুঁকি এড়ানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’

road safety campaigns reckless driving Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy