কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে চলছে হোর্ডিং নামানো। সোমবার, পিলখানায়। — দীপঙ্কর মজুমদার
নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছিল।
তা বলে শাসক দলের ফ্লেক্স-হোর্ডিং নামিয়ে ফেলা!
সরকারি সম্পত্তির গায়ে লাগানো শাসক দলের হোর্ডিং-ফ্লেক্স খুলতে যাওয়ার ‘অপরাধে’ তাই তেঘরিয়ায় কমিশনের কর্মীদের তো বটেই, এমনকী থানার ওসিকেও আটকে রাখার অভিযোগ উঠল। শেষমেশ হার মেনে হোর্ডিং না খুলেই ফিরতে হল তাঁদের। আর হাওড়ার পিলখানায় কমিশনের কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি করার পরে কেড়ে নেওয়া হল ক্যামেরা, মুছে দেওয়া হল ঘটনার যাবতীয় ছবি। আরও অভিযোগ, পুরোটাই ঘটল পুলিশের সামনে। এ ক্ষেত্রে পরদিন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে খোলা হল তৃণমূল প্রার্থীর সেই হোর্ডিং।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দলনেত্রীর সুর যত চড়া হচ্ছে, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দাপটও তত বাড়ার অভিযোগ উঠছে সর্বত্র। রবিবারের এই দু’টি ঘটনা সেই তালিকাতেই নয়া সংযোজন। তেঘরিয়ার ঘটনার পরে অবশ্য এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। আর হাওড়ার ঘটনায় রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে জানিয়েই ক্ষান্ত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তা।
এর আগে বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশকে তৃণমূল সমর্থকদের হাতে হেনস্থা হতে দেখা গিয়েছে। এমনকী, কোথাও কোথাও মার জুটেছে পুলিশের কপালে। আলিপুর থানায় তৃণমূলের তাণ্ডবের সময় টেবিলের নীচে লুকিয়ে পড়া পুলিশ কর্মীর ছবি এখনও টাটকা রাজ্যবাসীর স্মৃতিতে। অনেকের মতে, শাসক দলের দাপটে রাজ্যের পুলিশ যে কার্যত অসহায়, রবিবারের ঘটনাগুলিতে তা আরও এক বার প্রমাণ হল।
তেঘরিয়ার ঘটনায় অভিযোগ, পুরো বিষয়টির নেতৃত্ব দেন তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন। কমিশনের কর্মীদের অভিযোগ, তেঘরিয়ার একটি ক্লাবের সামনে রাজারহাট-গোপালপুর কেন্দ্রের প্রার্থী পূর্ণেন্দু বসুর প্রচার-হোর্ডিং ছিল। তা সরাতে আগেই নোটিস দেওয়া হয়েছিল। রবিবার হোর্ডিংটি খুলতে যান কমিশনের আধিকারিকেরা। অভিযোগ, তাঁদের বাধা দিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত ওই ক্লাবের সদস্যরা দাবি করেন, হোর্ডিংটি ক্লাবের সম্পত্তির উপরে লাগানো রয়েছে।
ইতিমধ্যে দোলা সেন ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং তাঁর মদতেই তৃণমূল কর্মীরা কমিশন আর পুলিশকর্মীদের ক্লাবের ভিতরে আটকে দেন বলে অভিযোগ। এমনকী, আটকে রাখা হয় বাগুইআটি থানার ওসি দেবকুমার রায়কেও। প্রায় দেড় ঘণ্টা এই পরিস্থিতি চলার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিধাননগরের এডিসিপি জয় টুডু। কার্যত অনুনয়-বিনয় করে কমিশন ও পুলিশকর্মীদের উদ্ধার করেন তিনি। তবে যে হোর্ডিং খুলতে গিয়ে এত হেনস্থা, সেটি অবশ্য না খুলেই ফিরতে হয় তাঁদের।
পরে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ওই কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার অমিতকুমার দাসের কাছে। সোমবার তিনি জানান, ঘটনাটির তদন্ত চলছে। কিন্তু এর পরেও কেন দোষীদের কাউকে গ্রেফতার করা হল না, সেই প্রশ্ন কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। দোলাদেবী অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ রকম কোনও ঘটনার কথা জানি না।’’
হাওড়ার পিলখানার ঘটনাটি ঘটে রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ। নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা সেখানে রাস্তার ধারে সরকারি সম্পত্তিতে লাগানো তৃণমূল প্রার্থী লক্ষ্মীরতন শুক্লর পোস্টার, ফ্লেক্স খুলতে গেলে আচমকা কয়েকশো জন তৃণমূল কর্মী তাঁদের ঘিরে ধরেন বলে অভিযোগ। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কিও। আরও অভিযোগ, কমিশনের আধিকারিক রূপায়ণ দে ঘটনার ছবি তুললে তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবি মুছে দেন তৃণমূল সমর্থকেরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হাওড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহম্মদ রুস্তমের নেতৃত্বে পুরো ঘটনাটি ঘটে। রুস্তমও অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমি এর বিন্দুবিসর্গ জানি না।’’
হাওড়ার ওসি নির্বাচন অর্ঘ্যপ্রসূন কাজী বলেন, ‘‘এ নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশের সামনেই ওই ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তার রির্পোট চেয়েছি। পুলিশেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে।’’
রবিবারের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান কমিশনের কর্মীরা। এ দিন অবশ্য বিনা বাধায় হোর্ডিংগুলি সরাতে পেরেছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy