Advertisement
E-Paper

জলের জালেই জরিমানা পুরসভার

জলের পাইপলাইন বসানোর জন্য দরপত্র ডাকা ও বরাত দেওয়ার পদ্ধতিতে ‘অনিয়ম’ থাকায় নজিরবিহীন ভাবে জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে পুর কর্তৃপক্ষকে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:২৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জলে ‘ত্র্যহস্পর্শ’ যেন কাটছেই না কলকাতা পুরসভার! একেই আন্ত্রিক নিয়ে রীতিমতো বিব্রত হতে হয়েছে পুরসভাকে। জলের পাইপলাইনে ছিদ্র থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে শোরগোল তৈরি হয়েছিল। যার রেশ এখনও যায়নি। এ বার জলের পাইপলাইন বসানোর জন্য দরপত্র ডাকা ও বরাত দেওয়ার পদ্ধতিতে ‘অনিয়ম’ থাকায় নজিরবিহীন ভাবে জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে পুর কর্তৃপক্ষকে। সেই জরিমানার আর্থিক মূল্য প্রায় ৬২ লক্ষ টাকা! ওই জরিমানা কী ভাবে এড়ানো যায়, তা নিয়ে পদস্থ কর্তারা একাধিক বার বৈঠক করেন। শেষে ওই বিষয়ে একটি রফাসূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, চার বছর আগে পানীয় জল সরবরাহের পাইপলাইনের দরপত্র ডাকাকে কেন্দ্র করে ওই বিতর্কের সূত্রপাত।পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৩-’১৪ সালে জলের পাইপলাইন বসানোর জন্য ডাকা দরপত্রে পাঁচটি সংস্থা অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু দরপত্রে অংশগ্রহণকারী একটি নির্দিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, অতীতে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিল। এমনকী, একাধিক পুরনিগমের তরফে তাদের কালো তালিকাভুক্তও করেছিল বলে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অন্য আর একটি সংস্থা। এখন নিয়মানুযায়ী, দরপত্র আহ্বানের সময়ে যদি সংশ্লিষ্ট সংস্থা কালো তালিকাভুক্ত হয়, তা হলে তাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হয় না।

সেই নিয়মেরই প্রেক্ষিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন যে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার দরপত্রও গ্রাহ্য করা হবে না। যদিও ওই বিতর্ক শুরুর আগেই দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, সেই সংস্থাই পাইপলাইন সরবরাহের জন্য ন্যূনতম দর দিয়েছিল। অর্থাৎ, তাদের আবেদন যদি গ্রাহ্য হত, তা হলে পাইপলাইন সরবরাহের বরাত ওই সংস্থারই পাওয়ার কথা ছিল বলে জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।

কিন্তু আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ওই সংস্থা পুরসভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষে রায় দিয়ে জানায়, পুরসভার পাইপলাইনের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সংস্থাকে বঞ্চিত করার জন্য পুরসভাকে এর পরে ৬১ লক্ষ ৯২ হাজার ৫১৪ টাকা জরিমানা দিতে বলে। পুরসভা ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গেলে ডিভিশন বেঞ্চ তাতে স্থগিতাদেশ দেয়। কিন্তু পুরো পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে দেখে এর পরেই পুর কর্তৃপক্ষ কোর্টের বাইরে মধ্যস্থতা করার জন্য তৎপর হয়ে পড়েন। সম্প্রতি তাতেই সাড়া মিলেছে বলে জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ। এক পদস্থ পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘এতদিন পাইপলাইনে ছিদ্র কোথায় হয়েছে, তা নিয়ে হইচই হল। তার উপরে জলের পাইপলাইন বসানোর দরপত্র নিয়ে যদি জরিমানার প্রসঙ্গ ওঠে, তা হলে তো মুশকিল। তাই কোর্টের বাইরেই বিষয়টির মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করা হয়েছে।’’

শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ মধ্যস্থতার পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থা জরিমানা নেবে না বলে কিছু দিন আগেই লিখিত ভাবে জানিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এ বার পুরসভার আইনি বিভাগ বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছে। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এ দফায় শেষ পর্যন্ত বিপদ হয়তো কেটে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, সংস্থা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। এ বার দেখা যাক কী হয়!’’

KMC Water Pipeline Water Born Diseases Cholera কলকাতা পুরসভা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy