অমিল: এমনই নোটিস দেওয়া হয়েছে শহরের পানশালায়। নিজস্ব চিত্র
চাঁদনি চক এলাকায় সাবেক বার-কাম-রেস্তরাঁটিতে ছবি তুলতে দেওয়ার অনুরোধ করতেই আর্ত স্বরে ‘না না’ করে উঠলেন ম্যানেজার। ‘‘না মশাই, ছেড়ে দিন! কাউকে জানাতে চাই না, এখনও কিছু বিয়ার পড়ে আছে। খবর পেয়ে লোকে হামলে পড়লে লাঠালাঠি ঘটে যাবে!’’
রেস্তরাঁটির মালিকের দাবি, ‘‘যেটুকু বিয়ার তাঁদের ভাঁড়ারে রয়েছে, তা আদতে দূরদর্শিতার জোর।’’ কল্যাণী, ধনেখালি বা ডানকুনির বিয়ার কারখানাগুলির কর্তৃপক্ষের মতিগতির আঁচ পেয়ে ভাগ্যিস, বুদ্ধি করে স্টক করে রেখেছিলেন! পার্ক স্ট্রিটের জনপ্রিয় পানশালার ম্যানেজার আব্দুল মজিদ এ দিকে কপাল চাপড়াচ্ছেন। বিয়ারের জোগান নেই আজ দু’সপ্তাহ। শনিবার দুপুরে তিনি বলছিলেন, ‘‘প্রথম ক’টা দিন পুরনো স্টক থেকে সামাল দিচ্ছিলাম, এখন বিয়ার এক ফোঁটাও নেই। বিয়ারের অভাবে ব্যবসা রীতিমতো মার খাচ্ছে।’’ কলকাতার উপকণ্ঠে একটি পাঁচতারা স্পা রিসর্টের প্রেসিডেন্ট অভিজিৎ বসুও বললেন, ‘‘এখনও দিন দুয়েক হয়তো বিয়ারের চাহিদা সামলানো যাবে, তার পরে কেউ চাইলে হাত তুলে দেওয়া ছাড়া গতি নেই।’’
দাম নিয়ে রাজ্য সরকার ও বিয়ার প্রস্তুতকারীদের মধ্যে দড়ি টানাটানির জেরে এ রাজ্যে বিয়ার তৈরি কার্যত বন্ধ। ফলে বিয়ারের জোগান কমতে কমতে তলানিতে। পানীয় বিক্রেতাদের সূত্রের খবর, এখন কর্পোরেশন গড়ে রাজ্য সরকারই উৎপাদকদের থেকে কিনে খুচরো বিক্রেতাদের মদ বিক্রি করছে। সরকারি প্রস্তাব ছিল, ১১০ টাকার বিয়ারের দাম বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করা হোক। পরে ১৪০ টাকায় রফা করার চেষ্টা হয়। কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যস্থতা হয়নি। ফলে
পানীয় রসিকদের বিয়ার ভাগ্যেই আপাতত কাঁটা।
মদ ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের কর্তা গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাজ্য জুড়েই বিয়ারের আকাল। সরকার যে দাম বেঁধে দিচ্ছে, তাতে বিয়ার বিক্রি এমনিতেই মার খেত।’’ গৌতমবাবুর হিসেব, মোটামুটি শীত বাদ দিয়ে বছরভর বিয়ারেরই জয়জয়কার। মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মদের দোকানের ব্যবসার ৭০% বিয়ারের উপরে নির্ভরশীল। গ্রীষ্ম এখনও ততটা চড়া হয়নি। তবে ফাল্গুনী রোদের ঝাঁঝেও গলা
ভেজাতে ঠান্ডা বিয়ারের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু লেক ভিউ রোড থেকে শুরু করে গড়িয়াহাট এলাকায় ভর দুপুরে তন্ন তন্ন করে খুঁজে স্থানীয় এক ডাক্তারবাবু হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের উপরে জনপ্রিয় রিটেল বিপণিটিও বিয়ারশূন্য। ধর্মতলায় অফিসপাড়া বা বাটানগরে বাড়ি— কোথাও পছন্দের বিয়ার নেই। জনৈক অর্ণব ঘোষাল বলছিলেন, ‘‘আগে চার-পাঁচ রকম বিয়ার রোজই থাকত। এখন বড়জোর দু’টি ব্র্যান্ড মিলছে। গরমে বিয়ারের অভাবে কী দিয়ে মেজাজটা তর হবে মাথায় ঢুকছে না।’’
পানীয় রসিকেরা জানেন, বিয়ার আদতে সর্বত্রগামী। রাজার ঘরে বা টুনির ঘরে— সবখানে সে দিব্যি মানানসই। ফলে বিয়ার ছাড়া অনেকেরই জীবন শুষ্ক। তা বলে নবান্নের কর্তারা আপসে নারাজ। এক কর্তা বলছেন, ‘‘দুধ তো নয় মদের দাম বাড়িয়েছি। আর ক’টা দিন দেখব, এর পরে ভিন্ রাজ্য থেকে বিয়ার সরবরাহ করব। ব্যস!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy