বহু বছর ধরেই পরিকল্পনায় ছিল। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। এ বার সেই পরিকল্পনাই বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহের বিধানসভা অধিবেশনেই পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন আইন, ২০০১ সংশোধনীর প্রস্তাব পাশ হতে পারে। প্রস্তাবিত হেরিটেজ আইনে কোনও বাড়ি বা ভবনের ঐতিহ্য (বিল্ট হেরিটেজ) রক্ষার বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে বাংলার সংস্কৃতি,
কৃষ্টি, নাচ, গান, উৎসব-সহ ঐতিহ্যমণ্ডিত যাবতীয় রীতিকেও (ইনট্যানজিবল হেরিটেজ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘দুর্গাপুজো যে বাংলার ঐতিহ্য, সে বিষয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু সেই পরম্পরাকেই আইনসিদ্ধ করা হবে প্রস্তাবিত সংশোধনীর মাধ্যমে। একই ভাবে হারিয়ে যাওয়া রান্নার পদ, গানের রীতিও ঐতিহ্যের মর্যাদা পেতে পারে।’’
যদিও আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে সংশোধিত হেরিটেজ আইনের প্রস্তাবকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ, বিজেপি-কে ‘বাংলার দল নয়’ বা ‘বহিরাগত’ হিসেবে প্রচার শুরু করেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন শাসকদল। বিজেপি-ও সেখানে বাঙালি আবেগকে ‘তুরুপের তাস’ করতে চাইছে। যে সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু-সহ বাঙালি মনীষীরা চলে আসছেন রাজনৈতিক তরজার বৃত্তে। পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি নিয়েও পারস্পরিক ‘দ্বৈরথ’ শুরু হয়েছে। শনিবার, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণেও সেই ‘লড়াই’ আরও স্পষ্ট হয়েছে।
হেরিটেজ সংরক্ষণবিদদের একাংশের বক্তব্য, না হলে এমন তো নয় যে এই প্রথম ‘ইনট্যানজিবল হেরিটেজ’-কে হেরিটেজ আইনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। বছর চারেক আগেই ইট-পাথরের ইতিহাস ও তার সংরক্ষণের পরিধির বাইরে বেরিয়ে ওই আইনকে বিস্তৃত করার কথা বলা হয়েছিল। সংশোধিত আইনের প্রাথমিক খসড়া পর্যন্ত তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এ বার উল্লিখিত সংশোধনী তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফেই তা অধিবেশনে পেশ করার কথা।