Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

যোধপুর পার্কের ফ্ল্যাটে খুন একা বৃদ্ধা 

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম শ্যামলী ঘোষ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, প্রথমে মাথার পিছনে সাঁড়াশি দিয়ে আঘাত, পরে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে বালিশ চেপে ধরেছিল আততায়ী।

আবাসনের এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন ওই বৃদ্ধা। —ফাইল চিত্র

আবাসনের এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন ওই বৃদ্ধা। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

শোয়ার ঘরের মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে আছেন এক বৃদ্ধা। মুখে বালিশ চাপা দেওয়া, গলায় কাপড় পেঁচানো। দেহে পচন ধরেছে। পাশে পড়ে রক্তমাখা একটি সাঁড়াশি। বৃহস্পতিবার দুপুরে যোধপুর পার্কের এক আবাসনের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হল বছর পঁচাত্তরের এক বৃদ্ধার দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম শ্যামলী ঘোষ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, প্রথমে মাথার পিছনে সাঁড়াশি দিয়ে আঘাত, পরে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে বালিশ চেপে ধরেছিল আততায়ী। দেহে পচন ধরে যাওয়ায় মনে করা হচ্ছে, সম্ভবত দিন দু’য়েক আগে ঘটনাটি ঘটে।

লেক থানার অন্তর্গত ১৪১, যোধপুর পার্কের ঠিকানায় ওই আবাসনটি পাঁচতলা। একতলায় গাড়ি রাখার জায়গা। বাকি চারটে তলের প্রতিটিতে প্রায় তিন হাজার স্কোয়ার ফুটের একটি করে ফ্ল্যাট। দোতলা ও তেতলার ফ্ল্যাট সাধারণত ফাঁকা থাকে। চারতলায় থাকতেন অবিবাহিতা শ্যামলীদেবী। ওই ফ্ল্যাটের মালিক তিনি ও তাঁর বোন দীপালি মিত্র। দীপালিদেবী বিবাহিতা। থাকেন আমহার্স্ট স্ট্রিটে। পুলিশ জানিয়েছে, শ্যামলীদেবী আগে একটি পেপার মিল সংস্থায় স্টেনোগ্রাফারের কাজ করতেন। একটা সময়ের পরে স্বেচ্ছাবসর নেন। একাই থাকতেন তিনি। নিজেই দোকান-বাজার করতেন। কোনও পরিচারিকা বা রাঁধুনি ছিল না। মাঝেমধ্যে দীপালিদেবী এসে দিদির খোঁজ-খবর নিয়ে যেতেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পড়শিরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তাঁরা শ্যামলীদেবীকে শেষ বার দেখেছিলেন। ওই দিন দুপুরে বাজারে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। অন্য আবাসিকেরা জানিয়েছেন, শ্যামলীদেবীর ফ্ল্যাটে রোজ খবরের কাগজ দিতে আসতেন এক যুবক। কলিং বেল বাজিয়ে কাগজ দেওয়ার পরে শ্যামলীদেবী বেরিয়ে সেটি নিয়ে নিতেন। কিন্তু, বুধবার সকালে

খবরের কাগজ দিয়ে গেলেও তিনি তা ঘরে নিয়ে যাননি। এ দিন সকালেও ঘটে একই ঘটনা।

পরপর দু’দিনের খবরের কাগজ জমা হতে দেখে ওই আবাসনের পাঁচতলার বাসিন্দা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান তাঁরই ফ্ল্যাটে কাজ করা ভবতোষ বেরা নামে এক যুবক। ভবতোষ এ দিন বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে কাগজ জমতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় স্যরকে জানিয়েছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম, কোথাও গিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। কিন্তু এ দিন বেলা বাড়তে পচা গন্ধ পাওয়ায় সন্দেহ হয়। তার পরেই স্যার ওঁর বোনকে ফোন করে খবর দেন।’’

পুরো ঘটনা শুনে আর দেরি করেননি দেবাশিসবাবু। ফোন করে খবর দেন শ্যামলীদেবীর বোন দীপালি মিত্রকে। তিনি ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে চলে আসেন। খবর পেয়ে আসে পুলিশও। দীপালিদেবীর উপস্থিতিতে ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই শ্যামলীদেবীর রক্তাক্ত ও পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী, ডিসি (এসইডি) কল্যাণ মুখোপাধ্যায়, লালবাজারের হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা এবং ফরেন্সিক দল। তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, খুনের পরে আততায়ী ঘরের জিনিসপত্র বিশেষ ঘাঁটাঘাঁটি করেনি। তবে শ্যামলীদেবীর মোবাইলটি ঘটনার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘‘খবরের কাগজ বিক্রেতা, শ্যামলীদেবীর কাছে আসা এক মালি এবং তাঁর এক পুরনো গাড়িচালককে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

তদন্তকারীদের সন্দেহ, বৃদ্ধার পরিচিত কেউ এই ঘটনায় জড়িত। কিন্তু, আবাসনে ঢোকার মুখে বা ওই বৃদ্ধার ফ্ল্যাটে কোনও সিসি ক্যামেরা না থাকায় আততায়ীর ছবি পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Jodhpur Park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE