E-Paper

চলছিল হিটার, ঘুমের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ বৃদ্ধার মৃত্যু হাসপাতালে

পরিবারের সদস্যেরা জানান, প্রতিদিন রুম হিটার চালিয়ে ঘুমোতেন পূর্ণিমা। কয়েক ঘণ্টা চলার পরে গভীর রাতে নিজেই হিটার বন্ধ করে দিতেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:১০
An image of death

—প্রতীকী চিত্র।

রাতে সবার সঙ্গে বসে খাওয়ার পরে নিজের ঘরে রুম হিটার চালিয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা। পাশের ঘরে ছিলেন ছেলে। গভীর রাতে চিৎকার শুনে দরজা খুলে ছেলে দেখেন, দাউ দাউ করে জ্বলছেন মা। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মৃত্যু হল তাঁর। মৃতার নাম পূর্ণিমা দে (৮২)। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বিছানার পাশে রাখা রুম হিটার থেকে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন তিনি।

সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেহালা থানা এলাকার নফরচন্দ্র দাস রোডের বাসিন্দা ছিলেন পূর্ণিমা। তেতলা বাড়িতে দুই ছেলে-বৌমার সঙ্গে থাকতেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে বাড়ির তেতলায় সকলের
সঙ্গে বসে খাওয়ার পরে ১০টা নাগাদ তেতলাতেই নিজের ঘরে শুতে চলে যান বৃদ্ধা। তাঁর পাশের ঘরে ছিলেন ছোট ছেলে।

পরিবারের সদস্যেরা জানান, প্রতিদিন রুম হিটার চালিয়ে ঘুমোতেন পূর্ণিমা। কয়েক ঘণ্টা চলার পরে গভীর রাতে নিজেই হিটার বন্ধ করে দিতেন। বৃদ্ধার ছোট ছেলে দেবনাথ দে বলেন, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ মায়ের ঘর থেকে চিৎকার শুনতে পাই। দরজা খুলে ঢুকে দেখি মায়ের গায়ের কাপড় দাউ দাউ করে জ্বলছে। বিছানাও পুড়ে গিয়েছে।’’

এর পরে পরিবারের সদস্যেরাই আগুন নিভিয়ে তাঁকে প্রথমে বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতেই বৃদ্ধাকে বাইপাসের এক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই মঙ্গলবার দুপুরে মারা যান তিনি। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় বৃদ্ধাকে অনেকটা সময় বাড়িতেই রেখে দিতে হয়েছিল।

বৃদ্ধার বৌমা দেবিকা দে বলেন, ‘‘যত অ্যাম্বুল্যান্সকে ফোন করা হয়েছে, সকলেই পুড়ে যাওয়ার ঘটনা শুনে ফোন কেটে দিয়েছে। শেষে একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স এসে মাকে নিয়ে যায়।’’

দীর্ঘ দিন ধরেই বেহালার বাসিন্দা পূর্ণিমারা। দুই ছেলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী। পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে রুম হিটারটি কেনা হয়েছিল। ঠান্ডার সমস্যা থাকায় পূর্ণিমার স্বামী রুম হিটারটি ব্যবহার করতেন। ২০২০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে নিজেই সেটি ব্যবহার করছিলেন বৃদ্ধা। প্রাথমিক তদন্তে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার প্রমাণ মেলেনি বলেই পুলিশ জানিয়েছে। তাদের অনুমান, রুম হিটারের উপরে কোনও ভাবে বৃদ্ধার গায়ের চাদর চলে গিয়েছিল। হিটারের সংস্পর্শে থাকায় সেই চাদরে আগুন ধরে যায়। ঘুমিয়ে থাকায় তা বুঝতে পারেননি বৃদ্ধা।

রুম হিটার থেকে এ ভাবে আগুন লাগার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরাও। রুম হিটার ব্যবহারে সতর্ক না হলে, এমন আরও বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকতে পারে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।

বুধবার এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃদ্ধার দেহের ময়না তদন্ত হয়। এর পরে দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রুম হিটার থেকে আগুন লাগে বলে মনে হচ্ছে। তবে শর্ট সার্কিটের প্রমাণ মেলেনি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Room heater Fire Accident Accidental Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy