E-Paper

প্রতিমার মুখ দেখলেন না অনামিকার মা-বাবা

গত ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ‍্যায় যাদবপুরের শিক্ষাঙ্গনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার সময়ে অনামিকার দেহ উদ্ধার হয় ঝিল থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:১১
অনামিকার মৃত্যুর তদন্তভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা।

অনামিকার মৃত্যুর তদন্তভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ঠিক পুজোর আগেই এক বদ্ধ ঝিলের জলে বিসর্জিত হয়েছিল সেই কন‍্যা। বৃহস্পতিবার, ঠাকুর বিসর্জনের বিষাদঘন বৃষ্টি-দিনে সারা ক্ষণ ঘরবন্দিই থাকলেন কন‍্যাহারা বাবা, মা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের কাছে ঝিলের জল থেকে উদ্ধার হয়েছিল যে মেয়ের দেহ, ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সেই ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের মা-বাবার এখন একটাই আশা, পুজোর পরে তাঁদের একমাত্র মেয়ের মৃত‍্যুর প্রকৃত কারণ পুলিশ খুঁজে বার করবে।

বিজয়া দশমীর বিকেলে অনামিকার বাবা অর্ণব মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘চতুর্থীর দিন শেষ বার লালবাজারের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সে দিনই মেয়ের সঙ্গের ছোট টাকার ব‍্যাগটা ফেরত পাই। পুলিশই বলে, ওটা ওর এক বন্ধুর কাছে ছিল। মেয়ের জুতোও ঝিল থেকে উদ্ধার হয়েছে।” তাঁর একটাই কথা, “আমার মেয়ে একা ইউনিয়ন রুমের পাশে শৌচাগারের দিকের অন্ধকার গলিতে যাওয়ার পাত্রী নয়। যাদবপুরে আমার মেয়ের পরিচিতদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করুক। তা হলে এই মৃত‍্যুর পিছনের আসল কারণ বেরোবে।” অর্ণবের বক্তব্য, “পুলিশ জেনেছে, অনামিকা জল আনতে যাচ্ছি বলে বেরিয়েছিল। অথচ আমরা দেখেছি, ওর ব‍্যাগে আধ বোতল জল আ়ছে। এটা কেন হবে? অনামিকার ঘনিষ্ঠদের ভূমিকা নিয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে।”

বছর দুই আগে পুজোর আগে নিজের মাকে হারিয়েছেন অর্ণব। বলছেন, “সে-বারের মতো এ বারও মণ্ডপে মায়ের মুখ পর্যন্ত দেখিনি। মনটাই মরে গিয়েছে।” বেলঘরিয়ার নিমতায় বাবা অর্ণব, মা মীনাক্ষীর সঙ্গে থাকতেন একমাত্র কন‍্যা মেধাবিনী অনামিকা। বাবা সেক্টর ফাইভে একটি সংস্থার অধীনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। পারিবারিক দুর্যোগের পরে তিনি কাজে যাচ্ছেন না। বাড়িতে একটি ছোট মুদির দোকান ছিল তাঁদের। অনামিকার মায়ের স্ট্রোক হয়েছে কয়েক বছর আগে। তিনিই কার্যত এক হাতে দোকান সামলাতেন। হতভাগ‍্য পরিবারটি এখন ওই দোকানের উপরেই নির্ভর করে বাঁচছে। পুজোর সময়ে একটু দোকানে বসা ছাড়া বাড়িতে পরিবারের মধ্যেই গুটিয়ে থেকেছেন অর্ণব, মীনাক্ষীরা। অর্ণব বলছিলেন, “শুধুমাত্র কয়েক জন আত্মীয় দেখা করতে বাড়িতে এসেছিলেন। এ ছাড়া বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে এক ফোঁটা যোগাযোগ ছিল না।”

গত ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ‍্যায় যাদবপুরের শিক্ষাঙ্গনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার সময়ে অনামিকার দেহ উদ্ধার হয় ঝিল থেকে। অর্ণবের কথায়, “তার একটু আগে মেয়ে বাড়িতে রাতে কী খাবে, ফোনে মাকে পাঁপড় ভাজতে পর্যন্ত বলেছিল। বাইরে পড়া না থাকলে মেয়ে তো সন্ধ‍্যা সাতটাতেই ফিরে আসত। সুতরাং এই মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা বলে ভাবতে পারছি না।”

অনামিকার মৃত্যুর তদন্তভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা। ঘটনাস্থল লাগোয়া তল্লাটের সিসি ক‍্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। যাদবপুরের কয়েক জন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে তারা কথাও বলেছে। কিছু তথ্য-সূত্রের ভিত্তিতে ১১ সেপ্টেম্বরের ওই সন্ধ্যায় ঠিক কী ঘটেছিল, তার পুনর্নির্মাণ ঘটিয়ে তদন্তে নিশ্চিত হতে চান তদন্তকারীরা।

তা ছাড়া, যাদবপুরে সিসি ক্যামেরা বাড়ানো থেকে কোনও বড় অনুষ্ঠান হলে কী করণীয়, তার রূপরেখা ঠিক করার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। পুজোর ছুটির পরে খুললে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বসারও পরিকল্পনা রয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Durga Puja 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy