খুন হওয়া আনন্দপুরের ব্যবসায়ী যুবকের শুধু টাকা হাতানোই নয়, রুবি মোড়ে থাকা তাঁর দোকানটি ভয় দেখিয়ে নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিল অভিযুক্তেরা। তাই ওই ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাড়ির ভিতরে হাত-পা বেঁধে ভয় দেখানোর পরেও সে সবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়। ধৃতদের জেরা করে এমন তথ্য জানা গিয়েছে। এমনকি, আটক নাবালক ঘটনার মূল চক্রীদের এক জন বলে জানা যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও অপরাধের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
বুধবার বিকেলে বারুইপুর থানা এলাকা থেকে আনন্দপুরের বাসিন্দা সোনু রাম (২৮) নামে এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। ৩১ জানুয়ারি থেকে সোনু নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের সদস্যেরা আনন্দপুর থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। দেহ উদ্ধারের পরে অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের তদন্তে নেমে বুধবার রাতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। আটক করা হয় এক নাবালককে। ধৃত তিন জনের নাম অনুপ মণ্ডল ওরফে রাজেশ, খোকন বৈদ্য, প্রদীপ নয়াবান। পরের দিন রাতে গ্রেফতার করা রঞ্জন চক্রবর্তী নামে পঞ্চম জনকে। চার জনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। আটক নাবালককে পাঠানো হয়েছে হোমে।
আটক নাবালকের বিরুদ্ধে বছরখানেক আগে এক নাবালিকাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ কসবা থানায় দায়ের হয়ে। ওই ঘটনায় অপহরণের ধারা যোগ করে তদন্তে নামে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও করা হয়। ফলে নাবালক হলেও তার অপরাধের শিকড় যে গভীরে, মানছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি ভিআইপি নগরের বাসিন্দা সোনু। ঘটনার রাতে শেষ বার স্ত্রীকে ফোনে তিনি জানিয়েছিলেন, এক বন্ধুর পার্টিতে যাচ্ছেন। আসলে পার্টির নাম করে সোনুকে ডেকে নিয়ে যায় অনুপ ও নাবালক। নিজের স্কুটারে করে পূর্ব পরিচিত অনুপের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও পরে সঙ্গীদের গাড়িতে উঠে পড়েন সোনু। মাঝের আসনে তাঁকে বসিয়ে যাওয়া হয় কালিকাপুরের ৪২ ফুট রাস্তা সংলগ্ন এলাকায়। গাড়িতেই সোনুর দোকানটি দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে অভিযুক্তেরা। সোনু রাজি না হওয়ায় তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। এর পরে গাড়ির পিছনের আসনে বসা নাবালক-সহ বাকিরা গলা টিপে খুন করে তাঁকে। অভিযুক্তেরা মত্ত ছিল বলেও জেরায় পুলিশ জেনেছে। জেরায় পুলিশ জেনেছে, সোনুর মৃত্যু নিশ্চিত হলে দেহ নিয়ে নরেন্দ্রপুরের কাছে একটি খালে ফেলে আসে অভিযুক্তেরা। তার আগে মৃতের প্যান্টের পকেট থেকে বার করে নেয় মোবাইল, ডেবিট কার্ড। দু’দিন পরে সেখান থেকে এক লক্ষের বেশি টাকা গায়েব করা হয়। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা ওই ব্যবসায়ীর পূর্ব পরিচিত। ফলে তাঁর বিশ্বাস অর্জন করে ডেকে নিতে অসুবিধা হয়নি। তবে এই খুনের পিছনে পুরনো শত্রুতা আছে কিনা, দেখা হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)