Advertisement
E-Paper

নিয়ম না মেনেও ঠাঁই হেলথ্‌ স্কিমে

অভিযোগ উঠেছে, পরিকাঠামো এবং পরিষেবার মানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে অবহেলা করে ওই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলি স্কিমে রাখার অর্থ, রোগীর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা করা। যেহেতু হে‌ল্থ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন সরকারি কর্মীরা, তাই সরকারের অভ্যন্তরেই চাপান-উতোর তুঙ্গে উঠেছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৭:০০

সরকারি হেল্‌থ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ‘ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট লাইসেন্স’ নবীকরণ করে জমা দেয়নি। অর্থাৎ, সেই হাসপাতালে রোগী পরিষেবা দেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো আছে কিনা, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। আবার অনেক হাসপাতাল সময়মতো ‘আপ-টু-ডেট’ ফায়ার লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ, সেখানে আগুন লাগলে রোগীদের নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অনেকেই জমা দিতে পারেনি দূষণ সংক্রান্ত কাগজপত্র। ফলে সেখানে চিকিৎসা বর্জ্য থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা, তা-ও অজানা।

কিন্তু সেই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম’ থেকে বার করা হচ্ছে না। বরং অর্থ দফতর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সেগুলি স্কিমের অন্তর্ভুক্ত রাখার মেয়াদ দফায়-দফায় বাড়াচ্ছে! তা নিয়েই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

অভিযোগ উঠেছে, পরিকাঠামো এবং পরিষেবার মানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে অবহেলা করে ওই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলি স্কিমে রাখার অর্থ, রোগীর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা করা। যেহেতু হে‌ল্থ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন সরকারি কর্মীরা, তাই সরকারের অভ্যন্তরেই চাপান-উতোর তুঙ্গে উঠেছে। গত ৭ অগস্ট রাজ্য অর্থ দফতরের মেডিক্যাল সেল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে কলকাতা ও একাধিক জেলার মোট ৫৮টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নাম আছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলির ‘রিনিউয়াল’ বা পুনর্নবীকরণ পদ্ধতি শেষ করা যায়নি, কারণ তারা ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্সের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি দিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও ‘রোগীদের অসুবিধা’র কথা ভেবে তাদের হেল্‌থ স্কিমে থাকার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে তাদের সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে। অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই না করেই তাদের কাজ চালিয়ে দিতে দেওয়া হচ্ছে।

অর্থ ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশই প্রশ্ন তুলেছেন এই ব্যবস্থা নিয়ে। হাসপাতালগুলিকে স্কিম থেকে বার করে দিলে রোগীরা সমস্যায় পড়বেন বলে অর্থ দফতর যুক্তি দিচ্ছে। কিন্তু পরিকাঠামোহীন জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে তাঁদের যে সঙ্কট বাড়তে পারে, সরকারের কি তা মনে হচ্ছে না? প্রশ্ন তাঁদের। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সরকারের এ ব্যাপারে আর একটু সতর্ক হওয়া উচিত।’’

স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মা বলেন, ‘‘হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হয়েছে কিনা, সেটুকু আমরা অর্থ দফতরকে জানিয়ে দিই। তার পরে কাকে হেল্‌থ স্কিমে রাখা হবে, সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ দফতর।’’ আর অর্থ দফতরের অন্যতম সচিব শিবচরণ রামের মন্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে একটা শব্দও বলব না।’’

অর্থ দফতর এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেরই খবর, সরকার নিরুপায়। এমনিতেই অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সরকারি হেল্‌থ স্কিমে থাকতে চাইছে না। কারণ আশঙ্কা, সরকার ঠিক সময়ে কর্মীদের চিকিৎসার টাকা মেটাচ্ছে না। তার উপরে এত কড়াকড়ি করলে যে ক’টি হাসপাতাল স্কিমে রয়েছে, সেগুলিও বেরিয়ে যাবে। সেই ফাঁকেই চলছে এমন ‘অনিয়ম’।

Health Scheme Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy