Advertisement
E-Paper

ভয়াল আগুন উস্কে দিল এক দশক আগের স্মৃতি

১১ এপ্রিল ২০০৮। রাত সওয়া একটা। মল্লিকঘাটের ফুলের দোকানগুলো একে একে ঝাঁপ বন্ধ করেছিল।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে, ন’বছর সাত মাস আগের সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল চণ্ডী সেনাপতির।

১১ এপ্রিল ২০০৮। রাত সওয়া একটা। মল্লিকঘাটের ফুলের দোকানগুলো একে একে ঝাঁপ বন্ধ করেছিল। তার পরে আরও খানিকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছিল রান্নার জোগাড় করতে। অন্য দিকে, চলছিল সারা দিনের বিকিকিনির হিসেব-নিকেশ। ফুলের সাজের কাজ যাঁরা করেন, তাঁরা ভিতরে বসে কম্পিউটারে ডিজাইন তৈরি করছেন। এমন সময়ে হঠাৎ ছিটকে এসেছিল চিৎকার— আগুন, আগুন! এর পরে মাত্র আধ ঘণ্টা। তার মধ্যেই জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল এ শহরের পাইকারি ফুলের বৃহত্তম বাজার মল্লিকঘাটের একাংশ।

ঘর-পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। তাই মঙ্গলবার রাতে আর্মেনিয়ান ঘাটে হঠাৎ জ্বলে ওঠা আগুনের শিখায় আতঙ্কটা নিমেষে ছড়িয়ে পড়েছিল ফুলবাজারের লক্ষ্ণণ, বুবাই, চণ্ডীদের মধ্যে। দেশের বাড়ি মেদিনীপুরে খবরটা পৌঁছতেই নারায়ণ নায়েকের মনে প্রথম প্রশ্ন এসেছিল, ফুলবাজার থেকে এই আগুনটা ঠিক কত দূরে? চণ্ডীর কথায়, ‘‘প্রায় ৭০০ মিটার দূরে। দোকান সামলাচ্ছিলাম। খবর পেয়ে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরেই ছুট লাগিয়েছিলাম কাল। আগের বার তো কিছু বাঁচাতে পারিনি। চারটে কম্পিউটার, বোঝাই ফুল আর বেশ কিছু টাকা— সব কিছু পুড়ে গিয়েছিল চোখের সামনে।’’

অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘সে বার আগুন শুনেই ছুটেছিলাম গঙ্গা থেকে বালতি করে জল আনতে। এক জন বলল, ওইটুকু জলে কিছু হবে না। পিছন ঘুরতেই দেখলাম রাক্ষসের মতো গিলে খাচ্ছে আড়াইতলা সমান আগুনের শিখা আর লালচে ধোঁয়া।’’

এত বড় দুর্ঘটনার পরে প্রায় দশ বছর কেটেছে। আদৌ কি বদলেছে ফুল বাজার? ‘‘তেমন কিছুই বদলায়নি। তবে ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে পুরনো ছন্দে ফিরে এসেছেন নিজেদের চেষ্টায়’’, বললেন এক ব্যবসায়ী। ফুল ব্যবসায়ীদের একাংশ আজও মনে করেন, আগুনটা কোনও দুর্ঘটনা ছিল না। মঙ্গলবারের আগুন নিয়েও সন্দিগ্ধ তাঁরা। এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘২০০৮-এ আগুন লাগার কারণ জানতে তদন্ত দাবি করা হয়েছিল। কয়েক মাস পরে সিআইডির তরফ থেকে এসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাও বলা হয়েছিল। আর কিছু জানি না।’’

আতঙ্কিত এক ফুল ব্যবসায়ী জানান, আর্মেনিয়ান ঘাটের যে দিকে ফুলবাজার, সে দিকেও পোর্ট ট্রাস্টের বড় বড় গুদাম রয়েছে। সেখানে কাপড়-পাট-সহ বিভিন্ন দাহ্য জিনিস মজুত করা থাকে। আর্মেনিয়ান ঘাটের টিকিট কাউন্টারের পিছনে রাখা থাকে ডিজেলের বড় বড় পিপে। যে কোনও দিন সেখানেও আগুন লাগতে পারে। তেমন কিছু হলে ফের আগুনের গ্রাসে যেতে পারে মল্লিকঘাট ফুলবাজারও।

সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি এবং মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতির এক সদস্য নারায়ণ নায়েক বলেন— সে বার তিন ভাগের এক ভাগ বাজার পুড়ে গিয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের আগে বাজার আধুনিকীকরণের একটি প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার সেই প্রকল্পে পাঁচ কোটি টাকাও দেয়। সেই মতো পোড়া বাজারের ব্যবসায়ীদের পোর্ট ট্রাস্টের গুদামের সামনে বসানোর ব্যবস্থা করতে চায় তৎকালীন শাসকদল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ীরা সন্দিগ্ধ হয়ে পিছিয়ে আসেন। এর পরে পোড়া দোকানের ব্যবসায়ীদের ফায়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়। দোকানগুলিতে বাধ্যতামূলক ভাবে ছোট অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার রাখতে বলা হয়। গ্যাস সিলিন্ডারও নিষিদ্ধ করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থা ওই পর্যন্তই!

২০০৮ সালের আগে ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। ওই ঘটনার পরে ৭০টি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার রাখা হয় বাজারে। তবে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২-এ। কাঠ, টিন, ত্রিপল আর প্লাস্টিকের কাঠামোর নীচে বসা সার সার স্থায়ী এবং অস্থায়ী কাঠামোর নীচে তাই আতঙ্কিত ব্যবসায়ী ও চাষিরা।

Fire Armenian ghat আর্মেনিয়ান ঘাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy