E-Paper

নেশামুক্তি কেন্দ্রে মৃত্যুর সাত মাস পরে গ্রেফতারি, কোর্টের নির্দেশে কি কড়া পুলিশ

রিয়া চৌহান এবং সাগরিকা ব্যাপারি নামে ওই দুই ধৃতকে বুধবার আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে পেশ করা হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩০
দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। —প্রতীকী চিত্র।

ঠাকুরপুকুরের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে ২৮ বছরের এক তরুণীর রহস্য-মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রিয়া চৌহান এবং সাগরিকা ব্যাপারি নামে ওই দুই ধৃতকে বুধবার আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে পেশ করা হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়। সূত্রের খবর, ধৃতেরা নেশামুক্তি কেন্দ্রের সঙ্গেই যুক্ত। এই ঘটনায় প্রথম থেকেই পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিল মৃতার পরিবার। উল্লেখ্য, গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল পৌলোমী ধর নামে ওই তরুণীর দেহ। নেশামুক্তি কেন্দ্রে তাঁকে খুন করা হয়েছে এবং যথাযথ তদন্ত হচ্ছে না, এই অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পৌলোমীর বাবা। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই হাই কোর্ট কেস ডায়েরি তলব করেছে। মৃতার বাবাকে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানোরও নির্দেশ পুলিশকে দিয়েছিল তারা। মামলার পরবর্তী শুনানি ১১ ডিসেম্বর।

গত ৩১ মে রাতে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে পৌলোমীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, পুলিশ মৃতার পরিবারকে না জানিয়েই দেহ বার করে নিয়ে যায়। পরের দিন, অর্থাৎ ১ জুন মৃতার পরিবার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ প্রাথমিক ভাবে দাবি করেছিল, পৌলোমী আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু পরিবার পাল্টা দাবি করে, নেশামুক্তি কেন্দ্রের শৌচাগার থেকে পৌলোমীর দেহ যে অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল, তা দেখে ধরে নেওয়া শক্ত যে, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। তরুণীর বাবা দীপককুমার ধর জানান, তাঁদের মেয়ে ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়া ছিলেন। একাধিক নামী হোটেলে চাকরি করার পরে একটি বহুজাতিক সংস্থায় যুক্ত হন। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক জন সহকর্মীর সূত্রে নেশার কবলে পড়েছিল মেয়ে। ২০১৯ সালে ওকে ঠাকুরপুকুরের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে এক বার ভর্তি করানো হয়। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর মেয়েকে ফের সেখানে ভর্তি করি।’’

দীপকের দাবি, প্রথম দেড় মাস তাঁদের মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। চলতি বছরের ১১ মে শেষ বার তাঁদের সঙ্গে মেয়ের দেখা হয়। ২৫ মে দীপক মেয়ের খোঁজ নিতে ফোন করলেও নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তারা ফোন ধরেননি। দীপকের দাবি, ৩০ মে নেশামুক্তি কেন্দ্রের এক কর্তাকে ফোন করলে তিনি বাইরে আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। ৩১ মে মধ্যরাতে অচেনা একটি নম্বর থেকে ফোন আসে দীপকের কাছে। অত রাতে অচেনা নম্বর দেখে তিনি ধরেননি। তাঁর কথায়, ‘‘পরের দিন সকালে ফের অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোনে জানতে পারি, মহেশতলা থানার জিঞ্জিরাবাজার আউটপোস্ট থেকে ফোন করা হয়েছে। পৌলোমী মারা গিয়েছে! পুলিশ আমাদের বলে, মেয়ে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় মারা গিয়েছে।’’

মৃতার বাবার প্রশ্ন, ‘‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে যেখানে নেশামুক্তি কেন্দ্রের আবাসিকদের কোনও ওড়না বা কাচের জিনিস রাখতে দেওয়া হয় না, সেখানে মেয়ে ওড়না পেল কী ভাবে? পরে আদালতের নির্দেশে নেশামুক্তি কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে গিয়ে বুঝি, মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। মেয়ের গলায় যে ওড়নার ফাঁস লাগানো ছিল, সেটি আমার মেয়েরই নয়।’’ দীপকের আরও অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলের মাত্র দু’টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়েছে। অথচ, ঘটনাস্থলে আরও ক্যামেরা রয়েছে। মেয়েকে মারধরের স্পষ্ট ফুটেজ থাকলেও পুলিশ এত দিন কাউকে ধরেনি কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

হরিদেবপুর থানার কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। যে নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা জানিয়েছে, আদালতে সব জানানো হয়েছে। হরিদেবপুর থানা কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম ডিভিশনের অন্তর্গত। ওই ডিভিশনের এক পদস্থ পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘থানা থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে আদালতে। গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে বলেই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

arrest Mysterious death police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy