হাতে কয়েক হাজার টাকা থাকলেই হল। তার পরে পাইপ পুঁতে পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে নেওয়া। আইনের ফাঁক গলে এ ভাবেই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পাম্প আর্সেনিকের বিপদ বাড়িয়ে চলেছে। সরকারি নথিভুক্ত পাম্পের তুলনায় যে পাম্পের সংখ্যা কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে পাঁচ-ছ’গুণ বেশি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু বেশি হলে কী হবে, গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তোলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইন থাকলেও ছোট নলকূপের জন্য তেমন কোনও আইন নেই। যার ফলে কলকাতারই একাধিক অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতায় ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের উপস্থিতি ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।
ওই এলাকার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরদের বক্তব্য, এমনিতেই দক্ষিণ কলকাতায় পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। কারণ, জল সরবরাহের সেই পরিকাঠামোই এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি দক্ষিণে। ‘ক্যাপসুল’ বুস্টার পাম্পিং স্টেশন করে, পাইপলাইনের মাধ্যমে পুরসভা পরিস্রুত জল সরবরাহের চেষ্টা করলেও তার পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। ফলে বহু বাসিন্দাই ছোট নলকূপ বসিয়ে মাটি থেকে জল তুলছেন।
‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা, অধ্যাপক অরুণাভ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘ছোট নলকূপ বসানো আটকানোর জন্য আইনে সংস্থান নেই। ফলে অনেকেই মাত্র কয়েক হাজার টাকা খরচে জল তুলে নিচ্ছেন।’’ বেআইনি ভাবে পাম্পের মাধ্যমে জল তোলার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল বছর পাঁচেক আগে। বিষয়টি নিয়ে মামলা হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুর কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছিলেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কড়া শাস্তি, যেমন জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টিতে তেমন নজরদারি নেই বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তাদের একাংশ। অনেক ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের আবার বক্তব্য, জল সরবরাহের ঘাটতি মেটাতে পুরসভা তো নিজেই অনেক সময় নলকূপ বসাচ্ছে! ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গভীর নলকূপের উপরে নির্ভরতা কমানোর পরিবর্তে জলের ঘাটতি মেটাতে পুরসভাই এই পন্থা নিয়েছে। যা আর্সেনিকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।’’