পল্লব রায়গুপ্ত
বিজ্ঞানের কঠিন তত্ত্বকে জনমানসে সহজ ভাবে পৌঁছে দেওয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ডাক পেয়েছেন তিনি। কিন্তু আগামী নভেম্বরে জেনিভার সার্ন গবেষণাগারে কি যেতে পারবেন আসানসোলের স্কুলশিক্ষক পল্লব রায়গুপ্ত? এমন সুযোগের আনন্দ তাই তাঁকে সে ভাবে ছুঁতে পারছে না। কারণ, এই অতিমারি পরিস্থিতির কারণে সার্ন এ বছর প্রতিযোগীদের রাহাখরচ জোগাচ্ছে না। গাঁটের কড়ি খরচ করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার সামর্থ্য নেই পল্লববাবুর। বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। কিন্তু কী হবে তা জানি না।’’
সুইৎজ়ারল্যান্ডের দুই বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান সার্ন এবং ইপিএফএল যৌথ ভাবে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে যাঁরা বিজ্ঞানকে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেন, তাঁরা সেখানে আবেদন পাঠাতে পারেন। সেই আবেদন ও কাজের খতিয়ান দেখে এ বছর ৪৯ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কোয়ান্টাম, গ্র্যাভিটি, প্রোটন, টাইম ইত্যাদি সংক্রান্ত সাতটি বিষয়ের মধ্যে যে কোনও একটির উপরে নিজস্ব প্রকল্প পেশ করবেন প্রতিযোগীরা। ৪৯ জনের তালিকায় ভারত থেকে রয়েছেন আদতে সিউড়ির বাসিন্দা এবং আসানসোলের একটি বেসরকারি স্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক পল্লব রায়গুপ্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরাখণ্ডের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর নেশা হল পদার্থবিদ্যার কঠিন তত্ত্বকে সহজ ভাবে স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।
পল্লববাবু জানান, তিনি মূলত কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং কণা-পদার্থবিদ্যার (পার্টিকল ফিজ়িক্স) উপরেই সরল ভাবে বিভিন্ন বক্তৃতা ও প্রকল্প করেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও তাঁর কোয়ান্টাম তত্ত্বের উপরেই বক্তৃতা পেশ করার কথা। ইদানীং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে দুনিয়া জুড়ে গবেষণা চলছে। সেই তত্ত্বকেই সহজে বোঝাতে চান তিনি। বছরের অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানপ্রেমী প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে বক্তৃতা দেন এই শিক্ষক। অতিমারি পরিস্থিতিতে সশরীরে হাজির না হলেও ওয়েবিনার চর্চা করে গিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, পদার্থবিদ্যার এই কঠিন তত্ত্বগুলি কি সহজ ভাবে অল্পবয়সি পড়ুয়াদের বোঝানো সম্ভব? তিনি বলছেন, ‘‘হাতেকলমে সামান্য উপকরণ দিয়ে বোঝানো সম্ভব। তাতে মূল তত্ত্বের গভীরে না প্রবেশ করেও মৌলিক ধারণা তৈরি হয়।’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, জলীয় বাষ্প তৈরি করে তা ঘনীভূত করে মেঘ তৈরি হওয়ার যে বিজ্ঞান তা অতি সহজেই দেখানো সম্ভব। কী ভাবে পদার্থ একটি অবস্থা থেকে ভিন্ন অবস্থায় রূপান্তরিত হচ্ছে সেই কঠিন তত্ত্বকে এ ভাবেই বোঝানো যেতে পারে। পল্লববাবুর কথায়, ‘‘বিজ্ঞান মানে জটিল সমীকরণের কারসাজি নয়, বরং সহজে তাকে মানুষের মনে প্রবেশ করানোই আমার লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy