জরিমানা বাবদ আদায় হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় দু’কোটি টাকা। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই সময়সীমার মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র নেই বা বৈধ শংসাপত্র নেই, এমন যানের সংখ্যা ছিল ১.৩৫ লক্ষ!’’
ফাইল চিত্র।
ধোঁয়া-দূষণ নিয়ন্ত্রণে যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র (পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল সার্টিফিকেট বা পিইউসি) থাকা শুধু বাধ্যতামূলকই নয়, বরং সেই শংসাপত্র বৈধ কি না, তার পরীক্ষার উপরে বার বার জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কিন্তু
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, একাধিক বার প্রচারের পরেও বহু গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণের বৈধ শংসাপত্র থাকছে না। আবার, বহু গাড়ি সংশ্লিষ্ট শংসাপত্র দেখাতেই পারেনি। সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটা ৪১ হাজারের কাছাকাছি!
শহরে গত আড়াই বছরে বায়ুদূষণের কারণ এত সংখ্যক গাড়িই পুলিশের আতশকাচের তলায় ধরা পড়েছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, যার মধ্যে শংসাপত্রই নেই (নো পিইউসি), এমন গাড়ির সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। আর বৈধ ছাড়পত্র নেই বা মেয়াদ-উত্তীর্ণ ছাড়পত্র রয়েছে, এমন গাড়ি প্রায় ১৫ হাজার। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘২০১৯-এর জুন থেকে ২০২১-এর নভেম্বর, এই সময়সীমার মধ্যে প্রায় ৪১ হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে বায়ুদূষণের জন্য মামলা রুজু করা হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, কলকাতা এবং হাওড়া, এই দুই শহরে প্রতি ১০০০ গাড়ির (পেট্রল ও ডিজ়েলচালিত) মধ্যে ৩৫টি গাড়ি বায়ুদূষণের কারণ। যাদের মধ্যে শুধুমাত্র ডিজ়েলচালিত প্রতি ১০০০ যানের মধ্যে ৩৪টি ধোঁয়া-দূষণের কারণ। তার মধ্যেও আবার ভাগ রয়েছে। ১০ বছরের পুরনো, প্রতি এক হাজার ডিজ়েলচালিত গাড়ির মধ্যে ৬৮টি গাড়ি ধোঁয়া-দূষণের কারণ।
এর পাশাপাশি, পেট্রলচালিত প্রতি এক হাজার গাড়ির মধ্যে ৩৭টি গাড়ি বায়ুদূষণের কারণ। ১৫ বছরের পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রে এই দূষণের মাত্রা কিছুটা বেশি। পরীক্ষিত ১৫ বছরের পুরনো প্রতি এক হাজারের মধ্যে ১০০টি গাড়িই দূষণের কারণ। ১৫ বছরের কম গাড়ির ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটি ৩৭। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর মতে, ‘‘শহরে যানবাহনের কারণে যে বায়ুদূষণ বাড়ছে, তা সাধারণ ভাবেই বোঝা যাচ্ছে। এই সমস্ত রিপোর্ট দেখলে প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে একটা তথ্যগত ধারণা মেলে যে, আমরা প্রতিনিয়ত কী পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করি।’’
রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, শহরে সিংহভাগ দূষণের কারণই হল যানবাহনের ধোঁয়া। অতীতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরের মোট দূষণের ৫০ শতাংশের নেপথ্যে রয়েছে গাড়ির ধোঁয়া। সেখানে শিল্পক্ষেত্র এবং গৃহস্থ ক্ষেত্রের কারণে দূষণ যথাক্রমে ৪৮ এবং ২ শতাংশ।
পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেরোনো নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের দূষণ কমাতে হলে ডিজ়েলচালিত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে বৈদ্যুতিক যানের উপরে।’’
অথচ, পুরনো ডিজ়েলচালিত গাড়ির সংখ্যা কমানোর পরিবর্তে বছরের পর বছর ধরে ধোঁয়া-দূষণের কারণ এমন গাড়ির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে পুলিশকে। পুলিশ সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ২০১৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত দূষণ-বিধি লঙ্ঘন করেছে কি না, এমন প্রায় ২৭ লক্ষ গাড়ি পরীক্ষা করা হয়েছিল। নোটিস দেওয়া হয়েছিল ১.৮ লক্ষ গাড়িকে। জরিমানা বাবদ আদায় হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় দু’কোটি টাকা। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই সময়সীমার মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র নেই বা বৈধ শংসাপত্র নেই, এমন যানের সংখ্যা ছিল ১.৩৫ লক্ষ!’’
সব মিলিয়ে যানবাহনের দূষণ-শাসন যে ভাবে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বেগ এবং চিন্তার যথেষ্ট কারণ থাকছে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy