Advertisement
E-Paper

অটোকাকুরা যখন ওদের বন্ধু

পথশিশুদের স্কুলের জন্য নানা জায়গায় দরবার করেও যখন সাড়া মেলেনি তখন ২৪টি ছেলেমেয়ের পড়ার জন্য ইউনিয়নের ঘরের একাংশ ছেড়ে দিলেন ‘দমদম ক্যান্টনমেন্ট-নাগেরবাজার’ রুটের অটোচালকেরা।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৩
পাশে: ইউনিয়ন রুমের চাতালে চলছে পাঠ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

পাশে: ইউনিয়ন রুমের চাতালে চলছে পাঠ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

তাঁদের ভাবমূর্তি সব সময়েই বিপদসীমার উপর দিয়ে হাঁটে! যাত্রী প্রত্যাখ্যান, দুর্ব্যবহার, খুচরো-বিবাদ, যাব না যান, মওকা বুঝে ভাড়া বৃদ্ধি— অভিযোগের অন্ত নেই। তবে তার উলটপুরাণও আছে।
যার নমুনা মিলবে দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এলে। পথশিশুদের স্কুলের জন্য নানা জায়গায় দরবার করেও যখন সাড়া মেলেনি তখন ২৪টি ছেলেমেয়ের পড়ার জন্য ইউনিয়নের ঘরের একাংশ ছেড়ে দিলেন ‘দমদম ক্যান্টনমেন্ট-নাগেরবাজার’ রুটের অটোচালকেরা।
স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে বাচ্চাদের পড়াতেন পথিকৃৎ সাহা। ট্রেনের হর্ন, যাত্রীদের ব্যস্ততা আর জটলার মাঝে স্কুলের পরিবেশ গড়ে উঠত না। পথিকৃতের কথায়, ‘‘প্ল্যাটফর্মের উপরে প্লাস্টিক পেতে বাচ্চাদের পড়াতাম। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে বা ট্রেন ধরার তাগিদে তা মাড়িয়ে চলে যেতেন। অনেক সময়ে বাচ্চাদের গায়েও পা ঠেকে যেত।’’ তখনই গোদো, শুভ, ঝুমা, সাইনাদের এই স্কুল অন্যত্র সরাতে কয়েক জনের কাছে আর্জি করেন তাদের ‘মাস্টারদা’। অনেকে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অটো ইউনিয়ন এক কথায় রাজি হয়ে যাবে আশা করেননি পথিকৃৎ। চলতি জানুয়ারি থেকে ইউনিয়ন রুম চত্বর হয়ে উঠেছে স্কুলের নতুন ঠিকানা।
ইউনিয়নের সহকারী সম্পাদক মিন্টু দে বলেন, ‘‘রুটের সম্পাদক সনৎ দাস-সহ ইউনিয়নের ১০৮ জন সদস্যই চেয়েছিলেন বাচ্চাগুলো যাতে পড়তে পারে। তাই পথিকৃৎ বলতেই রাজি হই।’’ এই পাঠশালায় অটোকাকুরা বিশ্বকর্মা পুজো যেমন করেন, তেমন ধুমধাম করে সরস্বতী পুজোর আয়োজনও করেছিলেন। খিদের জ্বালা খুদেদের পড়ায় মনোসংযোগ নষ্ট করছে বুঝতে পেরে তাঁরা নিজেরাই ব্যবস্থা করেছেন মিড-ডে মিল। ২৪ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কয়েক জন কাছের একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। ঝুমা এবং সাইনা বৈদ্যনাথ গার্লসের ছাত্রী।
মিন্টু বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের খাইয়ে পড়তে পাঠাই। তাই সুযোগ পেলে ওদেরও ভালমন্দ খাওয়াতে চেষ্টা করি।’’ পথিকৃতের কথায়, ‘‘ওদের সঙ্গে মিশে দেখেছি, চারপাশে যা দেখে সেগুলো পেতে ওদের কী আকুতি! বাঙুরে প্রথম যে দিন এসি রেস্তরাঁয় নিয়ে গেলাম কাটা-চামচ দিয়ে প্লেটে বাজনা বাজালো। সুধা আবদার করল, হিল জুতো পড়বে। তা পেয়ে সুধার কী আনন্দ!’’
এই বদলগুলোই পরিবর্তন গড়ছে প্রিয়াদের জীবনে। নামের পাশ থেকে স্টেশনের পরিচয় মুছে নতুন পরিচয় গড়ার স্বপ্ন দেখছে ঝুমা। সাইনাকে পড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চান ওর রং মিস্ত্রি বাবা। এই সব পরিবর্তনের সাক্ষ্মী থাকতে চান ওদের অটোকাকুরা।

Transport Emotional Auto Education Child Rights Right To Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy