E-Paper

বিহার থেকে শহরে পালিয়ে এসে ভোল বদল বাদশার, তবু হল না শেষরক্ষা

শনিবার অভিযুক্ত বাদশা, তার দাদা নিশু-সহ চার জনকে আনন্দপুরের অতিথিশালা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখনই পুলিশের নজরে আসে, খুনের সময়ে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া বাদশার সঙ্গে তার এখনকার চেহারার মিল নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ০৮:১০
খুনের পরে কলকাতায় পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মূল অভিযুক্ত তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশা।

খুনের পরে কলকাতায় পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মূল অভিযুক্ত তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশা। —ফাইল চিত্র।

পটনায় হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে চন্দন মিশ্রকে খুনের পরে কলকাতায় পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মূল অভিযুক্ত তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশা নিজেই। তবে গাড়ি নিয়ে কলকাতায় রওনা দেওয়ার আগে ঠিক করে নিয়েছিল, কোনও মোবাইল ফোন তারা ব্যবহার করবে না। সেই মতো গাড়িতে থাকা তার সঙ্গীদের কেউই মোবাইল ব্যবহার করেনি। একসঙ্গে কলকাতায় পৌঁছে অতিথিশালায় ঢুকে পড়ার পরে নিজের ভোল বদলে ফেলে বাদশা। শনিবার অভিযুক্ত বাদশা, তার দাদা নিশু-সহ চার জনকে আনন্দপুরের অতিথিশালা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখনই পুলিশের নজরে আসে, খুনের সময়ে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া বাদশার সঙ্গে তার এখনকার চেহারার মিল নেই। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল ভি সলোমন জানান, শুক্রবার অতিথিশালায় ঢোকার পরেই নাপিত ডেকে নিজের চুল, গোঁফ কেটে ফেলেছিল সে, যাতে পুলিশ তাকে চিনতে না পারে। যদিও তার সঙ্গী নিশুর চেহারা মিলে যাওয়ায় পুলিশ বুঝতে পারে, বাদশা তার চেহারার ভোল বদল করেছে।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ভিতরে চন্দনকে খুন করার পরে অভিযুক্তেরা কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। যা বিহার পুলিশ জানতে পারে বাদশার এক সঙ্গিনীকে গ্রেফতার করার পরে। সেই মতো বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ-কে সেই তথ্য সে দিনই জানিয়ে দেয় বিহার পুলিশ। বিভিন্ন জায়গার টোল প্লাজ়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এ রাজ্যের পুলিশ জানতে পারে, বৃহস্পতিবার রাতেই ১১টা নাগাদ কলকাতায় ঢুকেছে বাদশা।

এর পরে কলকাতার বিভিন্ন নম্বর প্লেট রিডিং ক্যামেরা খতিয়ে দেখে গাড়িটি চিহ্নিত করা গেলেও অভিযুক্তদের খোঁজ মিলছিল না। জানা গিয়েছে, পার্ক সার্কাসে এক রাত কাটানোর পরে নিউ টাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনে গিয়েছিল বাদশার গাড়ি। যা জানতে পেরে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ সেখানে হানা দিয়ে বাদশার পরিচিত এক যুবককে আটক করে। তার সঙ্গে থাকা চার সঙ্গীকেও আটক করা হয়। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করে ছেড়ে দেয়।

রাজ্য পুলিশের এসটিএফের আইজি গৌরব শর্মা জানান, ওই আবাসনের বাসিন্দা এক যুবক বাদশার পরিচিত। তাঁর কাছেই আশ্রয় নিতে এসেছিল বাদশা ও তার সঙ্গীরা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ আবাসনের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও ওই যুবক নীচে নেমে এসে বাদশার সঙ্গে দেখা করেননি। বাদশা ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল থেকে ওই যুবকের পরিচিত পটনার বাসিন্দাকে ফোন করে সে কথা জানায়। এর পরে সেখান থেকে চলে যায়।

পুলিশ জানায়, জেরায় বাদশা দাবি করেছে, তার কলকাতায় আসার উদ্দেশ্য ছিল অসুস্থ নিশুকে ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো। সেই সঙ্গে কলকাতার ভিড়ে লুকিয়ে থাকা। পরে সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়াও তার লক্ষ্য ছিল বলে বাদশার দাবি।

এ ছাড়া বাদশা আগেও কলকাতায় আসায় এখানে তার পূর্ব-পরিচিত লোকজন রয়েছে। তাই শহরে গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে তার অসুবিধা হবে না বলেই সে মনে করেছিল বলে পুলিশের দাবি। এ দিকে, পরিচয়পত্র না দেখেই থাকতে দেওয়ার অভিযোগে আনন্দপুরের ওই অতিথিশালার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

অন্য দিকে, চন্দন মিশ্রকে খুনের ঘটনায় পলাতক দুই অভিযুক্ত পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে জখম হয়েছে। তাদের নাম বলবন্তকুমার সিংহ এবং রবিরঞ্জন সিংহ। দু’জনেরই গুলি লেগেছে বলে সূত্রের দাবি। ভোজপুর জেলায় মঙ্গলবার বিহার পুলিশের সঙ্গে ওই এনকাউন্টার হয়। পরে বিহার পুলিশ দু’জনকে আটক করে। খুনের ঘটনার পরে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরায় তাদের বাদশার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police investigation Bihar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy