Advertisement
E-Paper

বিদ্যুতের বক্স থেকেই কি আগুন, তদন্তে ফরেন্সিক

বিদ্যুতের লাইনে শর্ট সার্কিট হলেই ‘এমসিবি’ স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিজের ক্ষেত্রকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই দোকানটির তেমন ক্ষতি হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৫
 —ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

পুড়ে খাক আশপাশের সব দোকান। কিন্তু বাগড়ি মার্কেটের ক্যানিং স্ট্রিট প্রান্তের একটি দোকানের ভিতরে কোনও ক্ষতি হয়নি! সেই দোকান পরীক্ষা করতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেছেন, সেই দোকানে লাগানো ছিল ‘এমসিবি’ (মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার)। বিদ্যুতের লাইনে শর্ট সার্কিট হলেই ‘এমসিবি’ স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিজের ক্ষেত্রকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই দোকানটির তেমন ক্ষতি হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি ছিল, ফুটপাতে বিদ্যুতের বক্সে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বাগড়ি মার্কেটের তিন তলাতেও আগুন দেখা গিয়েছিল। ফরেন্সিক সূত্র বলছে, ওই আগুন বিদ্যুতের লাইন দিয়ে ছড়িয়ে থাকতে পারে। সেই কারণেই ‘এমসিবি’ থাকা দোকানটি বেঁচে গিয়েছে। বিদ্যুতের বক্স পরীক্ষা করেও তার ভিতরে প্রচণ্ড উত্তাপের প্রমাণ মিলেছে বলে লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি। ওই সূত্র জানিয়েছে, ওই বিদ্যুৎ-বক্সের ভিতরের কেব্‌ল পুড়ে গিয়েছে। এমনকি, ভিতরের ধাতব তারও গলে গিয়েছে! যা দেখে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বক্সের ভিতরে আগুনের প্রচণ্ড তাপেই গলে গিয়েছে ওই ধাতব অংশ। কী ভাবে ওই বিদ্যুৎ-বক্সে আগুন লাগল তা জানতে গলে যাওয়া কেব্‌ল পরীক্ষা করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ওই বক্স পরীক্ষা করার পরে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বাইরের আগুন নয়। ভিতরে প্রথমে আগুন লাগার ফলেই ওই ধাতব তার পুড়ে গিয়েছিল। যা সাধারণত বাইরের আগুনে পুড়ে যায় না।

তা হলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবির কী ব্যাখ্যা? ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আগুন খুব দ্রুত তারের মাধ্যমে ছ়়ড়িয়ে প়ড়েছিল বাগড়ির অন্য তলায়। একমাত্র তিনতলার দোকানটি বাদ দিলে বাকি সব দোকানের বিদ্যুতের সংযোগ আগুন লাগার রাতে চালু ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ফুটপাতের সঙ্গে উপরের তলাতেও আগুন দেখতে পেয়েছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বাগ়ড়ি মার্কেটের বিদ্যুতের তারের রক্ষণাবেক্ষণ কতটা হত এবং রাতে দোকানদারেরা বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রাখতেন কি না, তা জানতে এ দিন মার্কেটের কেয়ারটেকার ও নিরাপত্তারক্ষীদের লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে পুলিশের একটি সূত্রের মতে, ওই মার্কেটে প্রচুর ওষুধের দোকান ছিল। তাদের ফ্রিজগুলি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হত। সেই কারণেই হয়তো রাতেও বিদ্যুৎ বন্ধ করা হত না। এ ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, জরুরি প্রয়োজনে বিদ্যুতের লাইন চালু রাখলেও এমসিবি বসানো প্রয়োজন ছিল। সেটা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মালিকপক্ষেরও দেখার কথা। একই ভাবে বাগড়ি মার্কেটে জলাধার তৈরি, তার রক্ষণাবেক্ষণ, জেনারেটর, পাম্প ও জলের পাইপের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে কেয়ারটেকার ও রক্ষীদের। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘বেশ কয়েকজন কেয়ারটেকার ও নিরাপত্তারক্ষীদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তা খতিয়ে দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

তবে বাগড়ি মার্কেটের মালিক রাধা বাগড়ি, তাঁর ছেলে বরুণরাজ এবং সিইও কৃষ্ণকুমার কোঠারির খোঁজ শুক্রবার রাত পর্যন্ত পায়নি লালবাজার। পুলিশের দাবি, তাঁরা ফেরার। ইতিমধ্যেই তিন জনের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়েছে। তাঁদের হদিস পেতে বিভিন্ন সূত্রকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

শুক্রবার থেকে পোড়া বাজারে ব্যবসায়ীদের ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত ওই বাজারে যাতে কেউ ঢুকতে না পারেন, পুলিশ তাই বাজারের ছ’টি গেট সিল করে দিয়েছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ওই বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি দোকান ছিল সুগন্ধীর। ওই সুগন্ধীর আগুন সহজে নেভে না। তাই মাঝে মাঝেই ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এখনই ব্যবসায়ীরা সেখানে ঢুকলে আবার কিছু ঘটতে পারে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই বাজারে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বাগড়ি মার্কেটের বাইরে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয়দের জটলা। সকলেই আগুনে পোড়া বাড়িটির বর্তমান অবস্থা দেখতে চাইছেন। দরজার সামনে পুলিশের গার্ডরেল লাগানো যাতে কেউ ভিতরে ঢুকতে না পারে। সেই সঙ্গে গেটের বাইরে পাহারায় রয়েছেন পুলিশকর্মীরা।

Forensic Meter Box Bagri Market Fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy