Advertisement
E-Paper

মোবাইল অ্যাপে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি

এক গ্রাহক মোবাইল অ্যাপ মারফত নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন অন্যের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু তাঁর নিজের ভাঁড়ারে টান পড়ছে না! তা হলে অন্য গ্রাহক টাকা পাচ্ছেন কী ভাবে? এই ঘটনার তদন্তে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তারা দেখেছিলেন, টাকা কমছে তাঁদের নিজেদের ভাঁড়ার থেকেই।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০১:১৮

এক গ্রাহক মোবাইল অ্যাপ মারফত নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন অন্যের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু তাঁর নিজের ভাঁড়ারে টান পড়ছে না! তা হলে অন্য গ্রাহক টাকা পাচ্ছেন কী ভাবে? এই ঘটনার তদন্তে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তারা দেখেছিলেন, টাকা কমছে তাঁদের নিজেদের ভাঁড়ার থেকেই।

অভিনব কায়দায় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা জালিয়াতি হওয়ার পরে গত ডিসেম্বরে লালবাজারের দ্বারস্থ হন ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তারা। তদন্তে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা কলকাতা ও মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে ন’জনকে। যার মধ্যে পাঁচ জন বিটি রোড সংলগ্ন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া। বাকিরা একটি মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যুক্ত। এক জন হরিহরপাড়ার একটি মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থার সুপার ডিলার। তবে ঠিক কী কায়দায় জালিয়াতি হত, তা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি গোয়েন্দারা। লালবাজার সূত্রে খবর, ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে পুলিশি হেফাজত হয়।

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, এর পরেই ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখার ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও অফিসার বিশ্বজিৎ নস্করের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। তদন্তে জানা যায়, হরিহরপাড়া থেকে জালিয়াতি করা হয়েছে। এই জালিয়াতির মূল চাঁই জুয়েল রানার বাড়িও সেখানেই। সে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। গোয়েন্দাদের দাবি, জুয়েল চার সহপাঠী ও হরিহরপাড়ার কিছু বাসিন্দাদের নিয়ে জালিয়াতির দলটি গড়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার জুয়েলকে ধরা হয়। পরে পাকড়াও করা হয় তাঁর চার সহপাঠীকে। শুক্রবার রাতে ধরা হয় বাকি চার জনকে। শনিবার সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চার অভিযুক্ত মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা সিম ভাড়া দিয়ে ওই চক্রকে সাহায্য করত।’’

গোয়েন্দারা বলছেন, প্রথমে ভুয়ো নথি দিয়ে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় দু’হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট খুলেছিল জালিয়াতরা। এর পরেই ওই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে ১৮ হাজারেরও বেশি ‘ওয়ালেট’ খোলা হয়। কী এই ওয়ালেট?

বর্তমানে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। তা দিয়ে টাকা লেনদেন, এমনকী জিনিসপত্রও কেনা যায়। বেসরকারি ব্যাঙ্কটি গত ডিসেম্বরেই তাদের নতুন ‘ওয়ালেট’ পরিষেবা চালু করেছিল। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়ারা নতুন ওয়ালেট পরিষেবার মধ্যে প্রযুক্তিগত কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করতে পেরেছিল। তা কাজে লাগিয়ে অ্যাপ মারফত টাকা সরাচ্ছিল। গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের বদলে ব্যাঙ্কের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা সরিয়ে নিতে পেরেছিল জালিয়াতেরা। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে আরও কিছু ওয়ালেট অ্যাপের যোগাযোগও মিলেছে।’’

কিন্তু এই জালিয়াতির সঙ্গে মোবাইল সংস্থার ডিলারদের যোগাযোগ কোথায়? ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার একাংশ জানাচ্ছে, এই সব ডিলাররা ভুয়ো নথি দিয়ে মোবাইল ফোনের সিম কার্ড বিক্রির আগেই চালু করে (প্রি-অ্যাক্টিভেট) রেখেছিল। অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জালিয়াতদের সে গুলি ভাড়া দিত তারা। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভুয়ো পরিচয়পত্রও ওই সব ডিলারেরা সরবরাহ করত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দেবাশিস বড়াল বলেন, ‘‘কয়েক হাজার প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম
উদ্ধার করা হয়েছে। এই সূত্রে আরও কিছু জালিয়াতির ঘটনা সমাধান হতে পারে।’’

তদন্তকারীরা বলছেন, এ ভাবে সিম কার্ড ব্যবহার করার ফলে প্রাথমিক ভাবে কোনও সূত্র পাচ্ছিলেন না গোয়েন্দারা। শেষে যে সিম কার্ড ও ই-মেল থেকে অ্যাপ ব্যবহার করা হয়েছিল, তার সূত্র থেকেই অভিযুক্তদের মোবাইল ফোনের
হদিস মেলে। তার পরেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের।

mobile app fraudery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy