এন্টালি এলাকায় অপরাধ দমনে পুলিশের একাংশের ব্যর্থতা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন শাসক দলের বিধায়ক। এ বার পুলিশের তল্লাশি-অভিযানের খবর আগাম পাচার হয়ে যাচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে লালবাজারের অন্দরেই।
গত বৃহস্পতিবার এন্টালি এলাকায় ভরদুপুরে দু’-দু’বার গুলি চালানোর ঘটনায় এন্টালি থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা। তার পরেও মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শেষমেশ ধরপাকড়ে নামানো হয় লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখাকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাতে পাকা খবর মিলেছিল, গুলি চালনায় মূল অভিযুক্ত কেলো, বাপি-সহ চার জন লুকিয়ে আছে ভোজেরহাটের কাছে। কিন্তু সেখানে হানা দিয়ে গোয়েন্দারা দেখেন, কেলো ও বাপি উধাও। রয়েছে তাদের দুই শাগরেদ অর্জুন সিংহ ও শেখ নিয়াজু। তাদের থানার হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। পুলিশ অবশ্য সরকারি ভাবে জানিয়েছে, বর্ধমান স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে শেখ নিয়াজুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের অন্দর থেকে অভিযানের খবর আগাম পাচার হওয়ার অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। গিরিশ পার্ক কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারি ফেরার থাকার সময়েও বারবার অভিযান চালিয়ে ধোঁকা খেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। লালবাজারের অন্দরে গোপালের সঙ্গে অনেক পুলিশ অফিসারের সখ্যতার কথা শোনা যায়। অভিযোগ উঠেছিল, সেই সূত্র থেকেই গোয়েন্দাদের গতিবিধির কথা আগাম ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল। এ ক্ষেত্রেও কেলো, বাপিদের সঙ্গে এন্টালি থানার একাংশের ঘনিষ্ঠতার কথা স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে জানিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করলেও বাসিন্দা ও গোয়েন্দাদের একাংশের সন্দেহ, ওই সূত্র থেকেই কেলো, বাপিরা তল্লাশি অভিযানের খবর পেয়ে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটে এন্টালি থানার বিবির বাগান রোডে। দুষ্কৃতীদের হুমকির প্রতিবাদ করায় সেখানে জনসমক্ষে শেখ আসলামকে গুলি করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে ছোড়া হয় বোমা। স্থানীয় বাসিন্দারা তাড়া করলে এক দুষ্কৃতী মোটরবাইক ফেলে পালায়। দুষ্কৃতীদের না পেয়ে বাসিন্দারা ওই মোটরবাইকে আগুন লাগিয়ে দেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়াজু-র দলবলই ফ্ল্যাট দখলের জন্য হুমকি দিতে এসেছিল। তখনই গুলি চালায়। এর পাল্টা হিসেবে এলাকার আর এক দুষ্কৃতী নেটোর বাহিনী হামলা করে। মতিঝিলের কাছে দুর্গাপুর মাঠে কেলো-বাপির দলকে লক্ষ করে পাল্টা গুলি চালায় নেটোর দলবল। তাতে সামেদ আলি নামে আরও এক জন জখম হন। পাল্টা বোমাবাজিও করে কেলো-বাপির দল।
এলাকাবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, এন্টালি এলাকার কেলো-বাপি বনাম নেটোর দলবলের গোলমাল নতুন নয়। এর আগেও এক গোষ্ঠীর সদস্যরা বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্যদের গুলি করেছে বা খুনের চেষ্টা করেছে। বোমাবাজিও হয়েছে। কিন্তু তার পরেও দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়নি এন্টালি থানা বা লালবাজার। ফলে দুষ্কৃতীদের সাহস উত্তরোত্তর বেড়েছে। এলাকার বাসিন্দা এক আইনজীবীর মন্তব্য, ‘‘কতটা সাহস বাড়লে খাস কলকাতার বুকে ভরদুপুরে গুলি বা পাল্টা গুলি চালানো যায়!’’
বাসিন্দারা এ সব বললেও পুলিশ কিন্তু এখনও সে ভাবে তৎপর হয়নি বলেই অভিযোগ উঠছে। তার ফলেই কেলো-বাপি বা নেটোদের ধরতে পারছে না লালবাজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy