আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তারেরা রাজ্য জুড়ে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তার জন্য কত টাকা অনুদান পেয়েছেন, কত টাকা কোথায় খরচ করেছেন, বুধবার তার হিসাব (অডিট রিপোর্ট) প্রকাশ করা হয়েছিল। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউবিজেডিএফ) তরফে আরজি কর হাসপাতালের গণকনভেনশনে যাবতীয় খরচের হিসাব দেওয়া হয়েছে। অনুদানের টাকা থেকে কতটা এখনও বেঁচে আছে, কী ভাবে সেই টাকা খরচ করবেন বলে ভাবছেন, জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এই হিসাব প্রকাশের পাঁচ দিন আগেই কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল বিধাননগর আদালত। গত ১১ এপ্রিল আদালত এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার সেই রায়ের প্রতিলিপি প্রকাশ্যে এসেছে।
জুনিয়র ডাক্তারেরা জনসাধারণের অনুদানের টাকা অপব্যবহার করছেন বলে মামলা করেছিলেন রাজু ঘোষ নামের এক ব্যক্তি। তিনি আদালতে জানিয়েছিলেন, আরজি কর আন্দোলনকে সমর্থন করে জুনিয়র ডাক্তারদের তহবিলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু যে কাজে ওই টাকা ব্যবহার করা হবে বলা হয়েছিল, তা হয়নি। বরং ওই টাকা দিয়ে অন্য কাজ করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। টাকার কোনও রসিদও দেওয়া হয়নি। অভিযোগকারী প্রথমে এ বিষয়ে সাইবার অপরাধ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তার পরে তিনি বিধাননগর আদালতে মামলা করেন। আদালত সব দিক খতিয়ে দেখার পর জানিয়েছে, মামলাকারীর অভিযোগ অনুমানের উপর নির্ভরশীল। তার তেমন ভিত্তি নেই। ফলে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক।
আরও পড়ুন:
মামলাকারীর অভিযোগে বলা হয়েছে, ডব্লিউবিজেডিএফ-এর সদস্যেরা আরজি করের ঘটনার তদন্ত এবং মামলার জন্য টাকা তুলেছিলেন। কিন্তু টি-শার্ট, ফ্লেক্স, ব্যানার ছাপা, মঞ্চ তৈরি, বিদ্যুতের খরচ প্রভৃতিতে ওই টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের থেকে সংগৃহীত টাকার অপব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রতারণা করা হয়েছে’ বলে উল্লেখ করে মামলাটি করা হয় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার সংশ্লিষ্ট ধারায়। পরে সমাজমাধ্যমে হেনস্থার অভিযোগে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছিলেন ওই মামলাকারী। অভিযোগ, তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে সমাজমাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে। প্রমাণ হিসাবে স্ক্রিনশটও দেখিয়েছিলেন তিনি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, জনগণের টাকার অপব্যবহারের অভিযোগ বা প্রতারণার অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ, স্বেচ্ছায় জনসাধারণকে দান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মামলার কাজে ওই টাকা তাঁরা খরচ করেননি, এ কথা বলাও ঠিক নয়। কারণ তদন্ত এবং মামলার সমস্ত খরচ রাজ্য সরকারই বহন করেছে।
উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের মামলার পর তাঁদের কোনও কোনও সদস্যকে থানায় তলব করা হয়েছিল। তখনই ডব্লিউবিজেডিএফ জানিয়েছিল, অনুদানের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। সেই মতো বুধবার আরজি কর হাসপাতালের গণকনভেনশনে হিসাব দেখান তাঁরা। হিসাব অনুযায়ী, জুনিয়র ডাক্তারেরা মোট ৩ কোটি ৫৮ লক্ষ ২১ হাজার ১৩৫ টাকা অনুদান পেয়েছিলেন। তার মধ্যে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা খরচ হয়েছে। এখনও তাঁদের হাতে আছে ২ কোটি ২৯ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬৬ টাকা। আদালতের রায়ের পর আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম সদস্য অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘ডব্লিউবিজেডিএফ-এর চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যার মূল লক্ষ্য ছিল গণআন্দোলনের কণ্ঠরোধ করা এবং আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করা। শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে পরিচালিত এই মামলার ভিত্তি ছিল সম্পূর্ণ অসার ও কাল্পনিক। বিধাননগর আদালত সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছেন।’’