ব্রিগেডে গীতার একটি অধ্যায় পাঠ করবেন প্রধানমন্ত্রী। — ফাইল চিত্র।
হাতে আর সময় নেই। আগামী রবিবার কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে হবে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচি। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সে কারণেই শেষবেলায় কর্মসূচিতে বদল আনতে হচ্ছে আয়োজকদের। মোদী নিজে গীতার একটি অধ্যায় পাঠ করবেন বলে জানিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন নিজের পছন্দের অধ্যায়ের কথাও। গীতাপাঠের পরে মোদীর বক্তৃতা এবং প্রস্থান। আয়োজকেরা মনে করছেন, মোদী চলে যাওয়ার পরে সমাগম ধরে রাখা যাবে না। তাই এখন থেকেই কর্মসূচিতে কাটছাঁটের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।
আয়োজকেরা ঠিক করেছিলেন, ব্রিগেড ময়দানে গীতার প্রথম, দ্বিতীয়, দ্বাদশ, পঞ্চদশ এবং অষ্টাদশ অধ্যায় সমবেত কণ্ঠে পাঠ করা হবে। ১৮ অধ্যায়ের মধ্যে পাঁচটি বেছে নেওয়ার কারণও জানানো হয়েছিল আয়োজকদের পক্ষে। প্রথম অধ্যায়ে গীতার প্রস্তাবনা রয়েছে। ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে অর্জুন স্বজনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নারাজ হয়েছিলেন এবং তার প্রেক্ষিতেই পার্থসারথি শ্রীকৃষ্ণ যে বক্তব্য রাখেন, তা-ই গীতা। সেটিই রয়েছে প্রথম অধ্যায়ে। এর পরে দ্বিতীয় অধ্যায়ে কেন গীতপাঠের প্রয়োজন তার ব্যাখ্যা রয়েছে। এর পরে দ্বাদশ অধ্যায়ে ভক্তিযোগ এবং পঞ্চদশ অধ্যায়ে রয়েছে পুরুষোত্তম যোগ। যেখানে ভগবানের স্বরূপ বর্ণনা রয়েছে। আর গীতার প্রথম ১৭টি অধ্যায়ের ৬২২টি শ্লোকে যা যা বলা হয়েছে তার সারাংশ রয়েছে অষ্টাদশ অধ্যায়ের মোক্ষ-সন্ন্যাস যোগে। এই অধ্যায়ের ৭৮টি শ্লোককে গীতার সারাংশ বলা যেতে পারে। এ ভাবেই কর্মসূচির বাছাই অধ্যায়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্গুণানন্দ মহারাজ।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মোদীর সফরের যে সূচি পাওয়া গিয়েছে তাতেই কর্মসূচিতে বদল আনতে হতে পারে। ঠিক ছিল গীতার মোট ২৩৭টি শ্লোক সমবেত কণ্ঠে পাঠ করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৭৮টি শ্লোক পাঠ না-ও করা হতে পারে। কারণ, অষ্টাদশ অধ্যায় বাদ যেতে পারে শেষ পর্যন্ত। অর্থাৎ পাঠ হবে ১৫৯টি শ্লোক।
কেন এই বদল? প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, মোদী মঞ্চে আসবেন সাড়ে ১১টা নাগাদ। আর মোদী চান গীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ের পাঠে অংশ নিতে। পুরুষোত্তম যোগের ২০টি শ্লোক আবৃত্তি করবেন তিনি। অনেক বলেন, গীতার মূল কথা বলা রয়েছে পঞ্চদশ অধ্যায়ে। সাধুসন্তরা প্রতি দিন ভোজনের আগে এই অধ্যায় পাঠ করে থাকেন। মোদীরও সেটিই পছন্দ। তাই পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠে অংশ নিতে চান তিনি। এর পরে মোদী চলে যাবেন। আয়োজকেরা চান, তার আগে প্রধানমন্ত্রী যেন এই অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা বলেন। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টা সময় মোদী মঞ্চে থাকবেন। তার মধ্যে তাঁকে বরণ পর্ব শেষে পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠের পরে আর সময় পাওয়া যাবে না। আর মোদীর বক্তৃতার পরে সকলেই চলে যেতে চাইবেন। সে কারণেই শেষ অধ্যায়টি বাতিল হতে পারে। এ বিষয়ে নির্গুণানন্দ বলেন, ‘‘আমরা পুরনো কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি রাখছি। সেই মতো বাংলার সর্বত্র অনুশীলন চলছে। তবে এত বড় কর্মসূচিতে প্রয়োজন মতো কিছু এ দিক, ও দিক তো হতেই পারে।’’ আয়োজকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘোষণা মতো পাঁচটি অধ্যায় ছেপে ইতিমধ্যেই এক লক্ষ গীতা তৈরি রাখা হয়েছে। সেখানে কাজি নজরুল ইসলামের ‘হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ...’ গানটি ছাপা হয়েছে। কারণ, ওই দিন গীতাপাঠের আগে সমবেত কণ্ঠে ওই নজরুল গীতিটিও পরিবেশিত হবে ব্রিগেড ময়দানে।
সর্বশেষ যা অনুষ্ঠানসূচি তৈরি হয়েছে তাতে, সকাল ১০টার সময়ে শুরু হবে একটি শোভাযাত্রা। রথে চেপে ‘গীতানাথ’ এবং দ্বারকামঠের বর্তমান শঙ্করাচার্য স্বামী সদানন্দ সরস্বতীকে ‘পার্থসারথি মঞ্চ’-এ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই পরে এসে বসবেন মোদী। শুরুতে হবে আরতি। এর পরে সন্ন্যাসীদের মঙ্গলাচারণ এবং নজরুল গীতি পরিবেশন। এর পরে শঙ্করাচার্যের বক্তৃতা। শেষে গীতাপাঠ। মোদী মঞ্চে আসার আগেই প্রথম, দ্বিতীয় এবং দ্বাদশ অধ্যায় পাঠ হয়ে যাবে। মোদী এলে পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠ এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা। এর পরে বাড়ি ফিরবেন ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy