মেয়ে দীপশিখার সঙ্গে প্রভাতবাবু। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইক চালক বাবা এবং তাঁর বন্ধুর মাঝে বসেছিল ছ’বছরের শিশুটি। বাইক চলছিল জোরে। আচমকাই রাস্তার মাঝে ৭-৮টি গরু ঢুকে পড়ে। তাদের পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। সোজা রাস্তার ধারে ডিভাইডারে ধাক্কা মারলে তিন জনই ছিটকে পড়েন। শিশুটির মাথা ফেটে যায়। দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে ভিআইপি রোডে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিন জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
মৃতদের নাম প্রভাত চক্রবর্তী, দীপশিখা চক্রবর্তী এবং গৌতম পাত্র। প্রভাতবাবু কাদাপাড়ার বাসিন্দা। গৌতমবাবু তাঁর বন্ধু। তিনি ইছাপুরের বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, বেলেঘাটা থেকে মোটরবাইকে করে তাঁরা চিনার পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন। মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন প্রভাতবাবু। পিছনে বসেছিলেন গৌতমবাবু ও দীপশিখা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, গাড়িটি তীব্র বেগেই চলছিল। ইকো পার্ক পার করে আকাঙ্খা মোড়ের দিকে একটি বাঁকে বাইক ঘোরাতে গিয়ে আচমকা কয়েকটি গরু সামনে চলে আসে। চালক ব্রেক কষলেও নিয়ন্ত্রণ হারান। ডিভাইডারে ধাক্কা খায় মোটরবাইকটি। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়। তখনও বেঁচে ছিলেন এক জন।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে প্রভাতবাবুর পরিজনেরা বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে ছুটে যান। পরিবার সূত্রের খবর, প্রভাতবাবু লিফ্ট রক্ষণাবেক্ষণের একটি সংস্থায় কাজ করেন। এ দিন তাঁর ছুটি ছিল। বিকেলে বন্ধু গৌতমবাবুকে চিনার পার্কের কাছে পৌঁছতে যাচ্ছিলেন বাইক চালিয়ে। মেয়ে দীপশিখাকেও বিকেলে ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তাই বন্ধুকে পৌঁছনোর সময়ে মেয়েকেও মোটরবাইকে তুলে নেন তিনি। কিন্তু দুই বন্ধুর মাথায় হেলমেট থাকলেও, মেয়ের মাথা ছিল হেলমেটহীন, অরক্ষিত।
নিউ টাউনে যে এমন ভাবে গরুর পাল রাস্তা পারাপার করে, সেটি নতুন বিষয় নয়। আগেও এই কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ দিনের এই মর্মান্তিক ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত স্থানীয়েরা। পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি, গাড়ির গতি বেশি থাকার ফলে আঘাত বেশি লেগেছে। বাসিন্দাদের কথায়, নিউ টাউনে মূল রাস্তার দু’পারে বহু ফাঁকা জমি রয়েছে। খাবারের সন্ধানে গরুর পাল রাস্তা পারাপার করে দু’দিকেই যায়। তাই এই রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
বিধাননগর পুলিশের একাংশের দাবি, বছরভর সচেতনতার কাজ চালানো হচ্ছে। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও চালকদের একাংশের হুঁশ ফিরছে না। উপরন্তু মাঝেমধ্যে রাস্তায় গরু চলে আসায় বিপদ বাড়ছে। তবে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করে, নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে এই সমস্যা কাটানোর চেষ্টা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy