E-Paper

জন্মদিনে শ্মশানেই কেক কেটে, বেলুনে সাজিয়ে শেষ বিদায় বালিকাকে

ময়না তদন্তের পরে মঙ্গলবার অদিত্রি এবং পরমার অন্ত্যেষ্টি হয়েছে। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই ছিল অদিত্রির জন্মদিন। সে কথা জানতে পেরে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই আবেগ-প্রবণ হয়ে পড়েন।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২৭
সন্তপ্ত: জন্মদিনেই অন্ত্যেষ্টি হল অদিত্রির।

সন্তপ্ত: জন্মদিনেই অন্ত্যেষ্টি হল অদিত্রির। ছবি: পরিবার সূত্রে।

কেকের উপরে লেখা, ‘হ্যাপি বার্থডে রিয়া’। বেলুন দিয়ে সাজানোহয়েছে জায়গাটি। জ্বলছে মোমবাতি। কাটা হয়েছে জন্মদিনের কেক। তবু, মুখে হাসি নেই কারও। গুমরে গুমরে কাঁদছেন সবাই। এক টুকরো কেক মেয়ের নিথর মুখে ছুঁইয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাবা। গত মঙ্গলবার, জন্মদিনেই এক বালিকার অন্ত্যেষ্টি এই ভাবে স্মরণীয় হয়ে রইল ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের কবীরধাম শ্মশানে।

মধ্যপ্রদেশ ভ্রমণ সেরে গত রবিবার রাতে রায়পুর থেকে ট্রেনে চড়ার কথা ছিল কলকাতার বাঘা যতীনের বাপুজিনগরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষিকা পরমা ভট্টাচার্য, তাঁর দুই মেয়ে ও পরমার প্রাক্তন দুই সহকর্মীর। সপ্তমীর দিন তাঁরা সকলে মিলে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গতসোমবার, লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালে তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। পরের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার ছিল পরমার ছোট মেয়ে অদিত্রির জন্মদিন। কিন্তু রবিবার বিকেলে রায়পুরের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় পরমা, অদিত্রি, পরমার দুই প্রাক্তন সহকর্মী এবং গাড়িচালকের মৃত্যু হয়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে পরমার পরিবারের। লক্ষ্মীপুজোর দিন রায়পুরে পৌঁছন পরমার স্বামী ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য ও প্রতিবেশী আশিস চক্রবর্তী।

ইন্দ্রজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ময়না তদন্তের পরে মঙ্গলবার অদিত্রি এবং পরমার অন্ত্যেষ্টি হয়েছে। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই ছিল অদিত্রির জন্মদিন। সে কথা জানতে পেরে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই আবেগ-প্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন, জন্মদিন পালন করার পরেই ১২-এ পা দিতে না-পারা অদিত্রিকে শেষ বিদায় জানানো হবে।

রায়পুর থেকে ইন্দ্রজিৎ জানালেন, সেখানকার এমস হাসপাতালে বড় মেয়ে অদ্রিকার চিকিৎসা করানোর পরে আজ, শুক্রবার তাঁরা কলকাতায় ফিরবেন। বুধবার রায়পুরেরএকটি কালীবাড়িতে পরমা ওঅদিত্রির শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়েছে। মা ও বোনের মৃত্যুর খবর এখনও জানেনা অদ্রিকা। ভিডিয়ো কলে মা ও বোনকে দেখতে চেয়েছিল সে। মা ও বোন অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং মায়ের ফোন ভেঙে গিয়েছে— এই বলে আপাতত ভুলিয়ে রাখা হয়েছে তাকে।

ভট্টাচার্য পরিবারের প্রতিবেশী আশিস জানালেন, ময়না তদন্তের পরে এক জায়গায় পরমা ও অদিত্রির দেহ রাখা হয়েছিল ফুল দিয়ে সাজানোর জন্য। আশিসের কথায়, ‘‘আমি চা খেতে বেরিয়ে কেকের দোকান দেখে অদিত্রির জন্য একটি কেক কিনেছিলাম। ওর ডাকনাম রিয়া। ইন্দ্রজিৎকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময়ে বললাম, অন্ত্যেষ্টির আগে রিয়ার মুখে একটু কেক দিতে। স্থানীয় যাঁরা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা আমার হাতে কেক দেখে একটু অবাক হন। তার পরে সে দিনই যে রিয়ার জন্মদিন, সে কথা জেনে ওঁরা সকলেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। ওঁরাই আমাদের জানান, রিয়াকে শেষ বিদায় দেওয়ার আগে ওর জন্মদিন পালন করতে চান।’’

সাজানো হয়েছে শ্মশান।

সাজানো হয়েছে শ্মশান। ছবি: পরিবার সূত্রে।

এর পরেই শুরু হয়ে যায় অদিত্রি ও পরমার অন্ত্যেষ্টির আগের মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখার প্রস্তুতি। স্থানীয়দের কেউ কিনে আনেন মোমবাতি, কেউ বা কিনে আনেন বেলুন। রায়পুরের কবীরধাম শ্মশানের খানিকটা অংশ বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। অদিত্রি ও পরমার কফিনের সামনেই নেভানো হয় মোমবাতি, কাটা হয় কেক। সেই কেকের টুকরো ছোট মেয়ে আর স্ত্রীর মুখে ছুঁইয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইন্দ্রজিৎ।

আশিস জানান, মৃতদেহ দু’টিকে বার করে আনার পরে মা-মেয়ের মুখে কেক ছোঁয়ানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘রিয়ার জন্মদিন পালনের ক্ষেত্রে পরমাই সব সময়ে প্রধান ভূমিকা নিত। তাই মা ও মেয়ের কফিনের সামনেই কেক কাটা হয়। সেই মুহূর্তটা এমনই, যার ভার বহন করাটা খুবই দুরূহ কাজ বলে মনে হচ্ছিল। এমন মুহূর্ত যেন কারও জীবনে না আসে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Birthday Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy