অতিথিশালার ঘর থেকে উদ্ধার হল এক তরুণীর মৃতদেহ। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের গৌরাঙ্গনগরের সাহা মার্কেটের কাছে একটি অতিথিশালায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা ওই তরুণীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম ইতিকা মণ্ডল (২৪)। এই ঘটনায় তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দম্পতির বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার সুকদেবপুর পঞ্চায়েতের কাঁটাবন এলাকায়। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে ওই দম্পতি কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁদের চার বছরের একটি মেয়ে আছে। জামাইয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের অভিযোগ তুলেছেন তরুণীর মা। যদিও তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি।
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ওই অতিথিশালা সম্পর্কে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশ এবং অতিথিশালা কর্তৃপক্ষের সামনেই এ দিন তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের একাংশের দাবি, ওই অতিথিশালায় নানা ধরনের সন্দেহজনক কাজকর্ম নিয়ে আগেও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি। অতিথিশালা সূত্রের খবর, সোমবার ওই দম্পতি সেখানে ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন, ইকো পার্কে ঘুরতে এসেছেন। এ দিন বিশ্বজিৎই পুলিশকে ফোন করেন। ইকো পার্ক এবং নিউ টাউন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। সেখানে যান উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকেরাও।
বিশ্বজিৎকে জেরা করে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, পরকীয়া এবং সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিবাদ চলছিল, যা সোমবার রাতে চরমে ওঠে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়ে থাকতে পারে ওই তরুণীকে। তবে, বিশ্বজিতের বক্তব্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
ইতিকার মা-বাবার বাড়ি কুশমণ্ডি থানার মালিগাঁও পঞ্চায়েতের কাঁঠালহাট এলাকায়। গত ১৯ জুলাই তাঁরা দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে রওনা হন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ইতিকার মা অঞ্জনা বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও মেয়ের উপরে জামাইয়ের অত্যাচার থামাতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে মেরেই ফেলল! কঠোর সাজা চাই জামাইয়ের।’’ এখন কী ভাবে দেহ কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তায় দরিদ্র ওই পরিবার।
ওই এলাকার তৃণমূল জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল বলেন, ‘‘আমি শুনেছি। সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা নেই। তবে খোঁজ নিচ্ছি।’’ জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও আমাদের কাছে আসেনি। এ ব্যাপারে এখনও কোনও তথ্য নেই।’’ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কুশমণ্ডি থানায় কোনও অভিযোগ ইতিকার পরিবারের তরফে জমা পড়েনি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)