Advertisement
E-Paper

চড়া আলোয় পাখিদের রাত হচ্ছে ‘দিন’

সৌন্দর্যায়নের চাপে উপচে পড়া আলোয় পাখিদের এখন গুলিয়ে যাচ্ছে দিন-রাতের হিসেব। সকাল-বিকেল যে ঝিলপাড়ে শোনা যেত পাখির ডাক, এখন সেখানে নিঝুম নীরবতা। বরং রাতে কলকলিয়ে উঠছে পাখি।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:১৬
চোখধাঁধানো: এমনই জোরালো আলোয় ঘটছে বিপত্তি। পাটুলিতে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

চোখধাঁধানো: এমনই জোরালো আলোয় ঘটছে বিপত্তি। পাটুলিতে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

সৌন্দর্যায়নের কাজে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় জীবকুল। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের তরফে এমন আবেদন বারবার করা হলেও আদতে তা নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তাই হয় না, এমন অভিযোগ পরিবেশ-সচেতন শহরবাসীর।

তার প্রমাণ মিলবে পাটুলির ৪৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় ঢুকলে। সৌন্দর্যায়নের চাপে উপচে পড়া আলোয় পাখিদের এখন গুলিয়ে যাচ্ছে দিন-রাতের হিসেব। সকাল-বিকেল যে ঝিলপাড়ে শোনা যেত পাখির ডাক, এখন সেখানে নিঝুম নীরবতা। বরং রাতে কলকলিয়ে উঠছে পাখি। এমনটাই বলছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। গত কয়েক বছরে কলকাতা পুরসভা এবং নগরোন্নয়ন দফতরের বরাদ্দ টাকায় ঢেলে সাজছে পাটুলি। রাস্তা, ফুটপাথ, পার্ক থেকে ঝিল, সব কিছুরই রূপটান দেওয়া হয়েছে। মেকআপের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে বসেছে ত্রিফলা আলো, উঁচু বাতিস্তম্ভে বসানো একাধিক আলো, রাস্তার ধারের গাছের জায়গায় রয়েছে বিশেষ আলো, স্তম্ভের গায়ে পেঁচানো নীল-সাদা এলইডি আলোর চেন। কিন্তু মেকআপটা যে চড়া হয়ে গিয়েছে, তা আর নজর করেনি পুরসভা। ‘‘সব কিছুরই তো একটা সীমা রয়েছে। কী হচ্ছে এ সব! ’’— বলছেন বিরক্ত এক প্রবীণ বাসিন্দা।

কয়েক মাস আগেও অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সময়ে আলোর আতিশয্যে সল্টলেক এলাকার পাখিদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হতে বসেছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। এ বার সৌন্দর্যায়নকে স্বাগত জানিয়েও পাটুলির বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আলোর তীব্রতায় হারিয়ে যাচ্ছে পাখিদের স্বাভাবিক জীবন। পুরসভার ১১ এবং ১২ নম্বর বরোর অন্তর্গত ১০১ এবং ১১০ নম্বর ওয়ার্ড দু’টিতে গত কয়েক বছরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। সম্প্রতি কেএমডিএ-র উদ্যোগে চালু হয়েছে রাজ্যের প্রথম ভাসমান বাজার। সেখানেও প্রচুর আলো ব্যবহার করা হয়েছে।

শাসক দলের কাউন্সিলরদের মতে, কলকাতার বিভিন্ন অংশের মতো পাটুলিও সেজেছে। ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “পরিবেশের কথা ভেবেই এলইডি আলোয় গুরত্ব দিচ্ছি। ওই আলোর তাপ যেমন কম, তেমনই বিদ্যুৎও কম লাগে।” যদিও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, রাতে রাস্তার আলো বেশি হলে তা পাখিদের জীবনযাপনের স্বাভাবিক ছন্দে প্রভাব ফেলে। দিন-রাতের হিসেব গুলিয়ে যাওয়ায় তাদের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। অনেক সময়েই নিজেদের অস্তিত্ব রাখতে পাখিরা বাসস্থানও পরিবর্তন করে। পাটুলি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের মত,“দিনে কাক, চড়াই, শালিক ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। আগে হাঁটতে বেরোলে সকাল-বিকেল কত রকম পাখির ডাক শোনা যেত!’’

এ প্রসঙ্গে ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণের প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা এবং পক্ষিবিশারদ সুজিত চক্রবর্তী জানান, প্রত্যেক প্রাণীর শরীরে একটি ঘড়ি কাজ করে, যাকে ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ বলা হয়। ওই ঘড়ির
ছন্দ মেনেই প্রাণীদের দৈনন্দিন জীবন চলে। মাত্রাতিরিক্ত আলোয় ওদের স্বাভাবিক জীবন বাধা পায়। প্রভাব পড়ে পাখিদের জীবনচক্রে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের প্রজনন। ফলে জীববৈচিত্র এবং পরিবেশেরও ক্ষতি হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, পাটুলি এলাকায় আলোর পরিমাণ অবশ্যই কমানো প্রয়োজন।
নয়তো আলোর উপরে আচ্ছাদন ব্যবহার করা উচিত।

Birds Patuli পাটুলি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy