শয্যাশায়ী বিকি দাস। নিজস্ব চিত্র
নাচকেই নিজের কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বছর সাতাশের যুবক। তবে করোনা অতিমারির জেরে বন্ধ হয়ে যায় নাচের অনুষ্ঠান ও ক্লাসগুলি। পেট চালাতে সম্প্রতি একটি অনলাইন খাবার ডেলিভারি সংস্থায় নাম লিখিয়েছিলেন। আর সেই কাজ করতে গিয়েই দুর্ঘটনায় পাঁজরের সাতটি হাড় ভেঙেছে বিকির। আপাতত তাঁর বিছানা থেকেই নামা বারণ। আঘাত রয়েছে হাত-পায়েও। সুস্থ হওয়ার পরে ফের নাচের মঞ্চে তিনি ফিরতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরাও।
কলকাতার চারু মার্কেট এলাকার বাসিন্দা বিকি দাস। ২০১৩-’১৪ সালে একটি সর্বভারতীয় নাচের রিয়ালিটি শোয়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছিলেন তিনি। এর পরে মুম্বই থেকে কলকাতায় ফিরে নাচকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। মুম্বইয়েও দীর্ঘদিন কাজ করেন তিনি। রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন নাচের শোয়ে বিকি ব্যস্ত থাকতেন বেশির ভাগ সময়। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নাচের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও চালু করেছিলেন তিনি। কিন্তু দেশ জুড়ে করোনার প্রকোপ বাড়তেই ধীরে ধীরে বন্ধ হয় নাচের ক্লাস, বিভিন্ন শো। বাড়িতে কার্যত বসেই ছিলেন সেই সময়ে। বাবা-মা-বোনকে নিয়ে বিকির সংসারে আর্থিক অনটন বাড়ছিল। করোনার জন্য তাঁর বাবার ব্যবসাতেও মন্দা দেখা দেয়। শেষমেশ তিনি সংসারের হাল ধরতে অনলাইনে খাবার ডেলিভারি সংস্থার
সঙ্গে যুক্ত হন।
গত শুক্রবার ছিল তাঁর এই কাজের দ্বিতীয় দিন। গোলপার্ক থেকে যোধপুর পার্কের দিকে খাবার ডেলিভারি দিতেই স্কুটার চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিকি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ যোধপুর পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে আচমকাই একটি মোটরবাইক এসে বিকির স্কুটারে ধাক্কা মারে। রাস্তায় পড়ে গিয়ে গুরুতর ভাবে আহত হন তিনি। স্থানীয়েরা দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আপাতত বিকিকে তিন মাস বাড়িতে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সুস্থ হওয়ার পরে তিনি আগের মতোই নাচে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলেই চিকিৎসকেরা বিকিকে জানিয়েছেন।
বিকির বাগদত্তা সঙ্গীতা মণ্ডল বলেন, ‘‘যে মোটরবাইকটি ওর স্কুটারে ধাক্কা মেরেছিল, সেটি এক পুলিশ অফিসারের বলে পরে আমরা জানতে পারি। ঘটনার সময়ে তিনি ধাক্কা দিয়ে উল্টে বিকিকেই গালমন্দ করতে থাকেন। এমনকি হুমকিও দেন। সঙ্গে সঙ্গে এলাকার মানুষজন প্রতিবাদ করেন। ঘটনার পরেই আমরা লেক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।’’
বিকি রবিবার বলেন, ‘‘আমি ঘটনার দিন ধীরেই স্কুটার চালাচ্ছিলাম। আচমকাই ওই পুলিশ অফিসার ধাক্কা মারেন। তার পরে আমাকে সাহায্য না করে উল্টে হুমকি দিতে থাকেন। পাঁজরের হাড় যে ভাবে ভেঙেছে, তাতে আর কোনও দিন নাচতে পারব কি না, জানি না।’’ তিনি জানান, করোনার প্রকোপ কমলে মাস দুই পরে সামাজিক বিয়ের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু এই দুর্ঘটনার জেরে সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে বসেছে।
বিকির পরিবারের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই অভিযুক্ত সার্জেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy