(ডানদিকে) টাকা না পেয়ে এটিএমের সামনে হতাশ তরুণী। (বাঁদিকে) কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের পাশে পরপর বন্ধ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএম। ছবি:দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও বিশ্বনাথ বণিক
ছিনতাই হওয়া টাকার অঙ্কটা শুনেই প্রায় আঁতকে উঠেছিলেন গড়িয়াহাট থানার ডিউটি অফিসার!
রবিবার দুপুরে থানা তখন মোটামুটি নিস্তরঙ্গ। এমন সময়ে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন তিন ব্যক্তি। সোজা ডিউটি অফিসারের কাছে গিয়ে জানালেন, বাসন্তীদেবী কলেজের সামনে থেকে দুই যুবক ভিজিল্যান্স অফিসার সেজে তাঁদের কাছ থেকে নগদ সাড়ে ৫৬ লক্ষ টাকা এবং গাড়ি ছিনতাই করে পালিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগ শুনেই তড়িঘ়ড়ি তা নথিভুক্ত করতে যাচ্ছিলেন অফিসার। তখনই উঠে এল নতুন ‘তথ্য’। টাকা ছিনতাই হয়েছে কুন্তল ঘোষ নামে এক জনের। কিন্তু তিনি অভিযোগ করবেন না। অভিযোগ জানাবেন তাঁর মাসতুতো ভাই কুণাল ঘোষ!
কবে হয়েছে ছিনতাই? এ বারও চমক। অভিযোগকারীরা জানালেন, শনিবার বিকেল ৩টে নাগাদ সাড়ে ৫৬ লক্ষ টাকা ও গাড়ি ছিনতাই হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মেরেকেটে কয়েকশো মিটার দূরের থানায় পৌঁছতে এক দিন পেরিয়ে গেল! পুলিশ সূত্র বলছে, এর সদু্ত্তর মেলেনি। তা-ও অভিযোগ লিখতে শুরু করেন ডিউটি অফিসার। ধীরে ধীরে সামনে আসতে থাকে আরও রহস্যের জাল।
কী রকম? পুলিশ বলছে, দুই যুবক নিজেদের ভিজিল্যান্স অফিসার বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। অভিযোগপত্রে সেই যুবকদের নাম দিয়ে দেন কুণাল। জিজ্ঞাসা করতে উত্তর মেলে, তাঁরা ওই যুবকদের চেনেন। কিন্তু পেশা জানতেন না।
কিন্তু তাঁরা সাড়ে ৫৬ লক্ষ টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেনই বা কোথায়?
পুলিশের দাবি, অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, কুন্তলবাবুর বাবা সজলকুমার ঘোষ আলিপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি। সেখানে টাকা দিতেই ওই দিন বিকেলে কসবার রাজডাঙা থেকে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটে সাড়ে ৫৬ লক্ষ টাকা নিয়ে গাড়িতে চেপে যাচ্ছিলেন কুন্তল এবং কুন্তলের শ্যালক অরবিন্দ রায়বর্মণ। কুন্তল নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বাসন্তীদেবী কলেজের কাছে ওই দুই যুবক হাত দেখিয়ে তাঁদের গাড়ি থামান। নিজেদের ভিজিল্যান্স অফিসার পরিচয় দেন এবং পরিচয়পত্র দেখান। এর পরে কুন্তলদের কাছে থাকা ব্যাগটি নিয়ে নেন তাঁরা। কিছু দূর গিয়ে তাঁদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন ওই দুই যুবক এবং গা়ড়ি নিয়ে চম্পট দেন। গাড়ি থেকে নামার পরে কুন্তল গোটা ঘটনাটি জানান কুণালকে।
তদন্তে নেমে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল ওরফে দেবরাজ সিংহ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের কাছ থেকে নগদ ২১ লক্ষ টাকা উদ্ধারও করা হয়েছে। তিনি ওই টাকা কোথা থেকে পেয়েছেন, তা জানতে ধৃতকে আলিপুর আদালতে হাজির করিয়ে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় পুলিশ। আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ধ্রুবজ্যোতিকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গাড়িটিও উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি আদতে ধ্রুবজ্যোতিরই। সে কথা যে সত্যি, তা অভিযোগকারীরা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। অভিযুক্তদের গাড়ি কেন তাঁরা নিয়েছিলেন, তা অবশ্য স্পষ্ট ভাবে পুলিশকে জানাননি তাঁরা। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, আলিপুরের যে নার্সিংহোমের কথা কুণালবাবু অভিযোগে জানিয়েছিলেন, সেখানে সজলকুমার ঘোষ নামে কোনও রোগীর কথাও সোমবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। যেমন এখনও সামনে আসেনি আর এক অভিযুক্তের বিশদ তথ্যও।
নোট-রহস্যে জেরবার তদন্তকারীদের অনেকেই বলছেন, ‘‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’’ নোট নিয়ে দেশ জোড়া তোলপাড়ের এই মরসুমে সেই ‘কালা ডালের’ খোঁজ পেতেই ধ্রুবজ্যোতি ও অভিযোগকারীদের বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy